বাসস
  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৫৩

সকলের জন্য একটি সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে: পরিকল্পনা উপদেষ্টা 

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ফাইল ছবি

ঢাকা, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দেশের সকল মানুষের জন্য একটি সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে হবে। এখন সময় এসেছে- সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।

তিনি বলেন, ‘ বাংলাদেশ  একেবারে গরিব দেশ নয়, আমরা উচ্চমধ্য আয়ের দেশ হতে চলছি। এখনতো আমাদের কোনো অজুহাত চলবে না যে, আমরা সবাইকে ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা দিতে পারবো না। তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও মৌলিক সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে।’

আজ রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রোটেকশন ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)। 

এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস-উর রহমান, মন্ত্রী পরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পবকি। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান। 

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বড় একটি অংশই সত্যিকারের উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। বর্তমানে ভাতাভোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশই ভূতুড়ে বা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী।

তিনি আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের দরিদ্র, প্রান্তিক ও অসহায় মানুষকে সহায়তা করার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তালিকায় নাম তুলছে এমন সব ব্যক্তি, যাদের মূলত প্রয়োজন নেই বরং রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রভাব কাজে লাগিয়েই তারা সুবিধা পাচ্ছেন। এতে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বাদ পড়ে যাচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, উপকারভোগীর সঠিক তালিকা তৈরিতে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে কার্যকর স্থানীয় সরকার না থাকায় এই প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু হলেও তা এখনো পূর্ণাঙ্গ নয়। এ অবস্থায় জাতীয় পর্যায়ে একটি কেন্দ্রীয় রেজিস্টার তৈরির পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য সামাজিক সুরক্ষা শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, এটি মানবিক ন্যায়বিচার, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথ। তবে এই ব্যবস্থা সঠিকভাবে কার্যকর করতে হলে ভূতুড়ে ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করার সময় এখনই।

তিনি বলেন, দুর্বল রাজস্ব নীতির কারণে সরকারের আয় সবসময় ব্যয়ের তুলনায় কম থাকে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প ও সামাজিক নিরাপত্তার খরচ মেটাতে সরকারকে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। দরিদ্রতার ভিন্ন ভিন্ন কারণ-যেমন কারও পরিবারে অতিরিক্ত সদস্য, কারও একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ অথবা উপার্জনক্ষম সদস্য আছে কিন্তু কর্মসংস্থান নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষার জন্য ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট বাজেটের প্রায় ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

এতে সামাজিক সহায়তা, সামাজিক বীমা, শ্রম-বাজারভিত্তিক কর্মসূচি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত অন্যান্য সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই কর্মসূচির আওতায় আসবে প্রবীণ, প্রতিবন্ধী, শিশু, নিম্ন আয়ের পরিবার এবং জলবায়ু কিংবা অর্থনৈতিক ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।