শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আজ ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান বহুমাত্রিক ও ঐতিহাসিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার দুই পক্ষের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, পাকিস্তান আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বহুমুখী এবং ঐতিহাসিক। আমরা বিদ্যমান সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছি।
তিনি বলেন, বৈঠকে অতীতের অমীমাংসিত বিষয়, ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং ক্রীড়া বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। কেননা দুই দেশের বার্ষিক লেনদেন বর্তমানে এক বিলিয়ন ডলারের নিচে রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের বাজারে সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (সাফটা) এর আওতায় বস্ত্র, জ্বালানি, ওষুধ শিল্প, কৃষি, মৎস্য ও পশুপালন এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রবেশাধিকারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। পাকিস্তানও বাংলাদেশে জ্বালানি রপ্তানি করার বিষয়ে আলোচনা করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে চট্টগ্রাম ও করাচির মধ্যে শিপিং পরিষেবা শুরু হয়েছে, তবে এটি নিয়মিত নয়। আমরা পরিষেবাটি নিয়মিত করার উপর জোর দিয়েছি। এছাড়া, ফ্লাইট পরিচালনার জন্য দুইটি বিমান কোম্পানিকে প্রাথমিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং এখন সরাসরি ফ্লাইট চালুর জন্য বিস্তারিত কাজ চলছে, যা বাণিজ্য, পর্যটন এবং অন্যান্য খাতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, উভয় পক্ষ উচ্চশিক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষ চিকিৎসা শিক্ষা, ওষুধ, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে, যেমন- সার্কের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর আলোচনা করেছি।
গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উভয় পক্ষ চলমান নৃশংসতা বন্ধ করতে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে এবং তারা দুর্ভিক্ষকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সহযোগিতা চেয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে নিরাপদে ফিরে যেতে পারেন।
তিনি জানান, উভয় দেশ একটি চুক্তি এবং পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। চুক্তিটি কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের সুযোগ তৈরি করবে।
সমঝোতা স্মারকগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, দু’দেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা- বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি) এর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, উভয় দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদের (আইএসএসআই) মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মোহাম্মদ ইসহাক দার বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে শনিবার দুই দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় আসেন।