শিরোনাম
এ. এস. এম. নাসিম
নোয়াখালী, ১৩ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ হাতিয়া উপজেলা। এখানে হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড ছাড়াও বিচ্ছিন্ন চরগুলো মিলে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষের বসবাস। হাতিয়ার বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌযান। কিন্তু প্রতিদিন অসাধু ট্রলার মালিক ও চালকরা ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী আনা-নেওয়া করায় এ পথে যাতায়াতকারীদের জীবনের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছেই।
প্রতিদিন নৌপথে পারাপার হওয়া কয়েক হাজার সাধারণ যাত্রী অসাধু এসব ট্রলার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ বলছে, এদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও সবসময় তা সম্ভব হয় না। এছাড়া বৈরী আবহাওয়াতে সি-ট্রাক ছাড়া অন্যকোনো নৌযান চলাচলের সুযোগ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে হাতিয়া যাওয়ার প্রধান ঘাট হচ্ছে চেয়ারম্যান ঘাট। এ ঘাট দিয়ে হাতিয়া, মনপুরা, ভোলাসহ বিভিন্ন ঘাটের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ছেড়ে যায় কয়েকটি ট্রলার। চেয়ারম্যান ঘাট-নলচিরা রুটে যাত্রীদের পারাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দুটি সি-ট্রাক থাকলেও সেগুলো প্রতিদিন একবার করে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু দিনের বাকি সময় হাজার হাজার যাত্রীকে ট্রলার বা স্পিডবোটের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্পিডবোট চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। স্পিডবোট বন্ধ হওয়ার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ট্রলারমালিক ও চালকরা।
তারা জানান, চেয়ারম্যান ঘাট-নলচিরা রুটে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য সি-ট্রাক একমাত্র ভরসা। কিন্তু যাত্রীদের চাহিদামতো সেটি চলাচল না করায় মালবাহী ট্রলার ও স্পিডবোটে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় যাত্রীদের। বেশির ভাগ ট্রলার মূলত মালবাহী। এরই মধ্যে কয়েকটি ট্রলারে যাত্রী পারাপার করা হয়। সেগুলোতে আবার মালামালও তোলা হয় কয়েক টন। একটি ট্রলারে মালামাল উঠানোর পর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা থাকে প্রায় একশত। কিন্তু অসাধু ট্রলার মালিক ও চালকরা ১৫০ জনের বেশি যাত্রী তুলে যাতায়াত করছে। এসব নিয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তাদের মারধরসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়।
জানা যায়, জুলাই মাসের প্রথম থেকে বেশিরভাগ সময় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি থাকায় উপজেলা প্রশাসন নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু সেটিকে উপেক্ষা করে ট্রলার চালায় মালিক ও চালকরা। এতে বৈরী আবহাওয়ার সময় ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা নদী পার হতে হয় হাজার হাজার যাত্রীকে। ভুক্তভোগীরা এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
হাতিয়ার বাসিন্দা আবদুর রহমান বাসসকে বলেন, ‘আমাদের যাতায়াতের দুর্ভোগ সুদীর্ঘকালের। মূল ভূখণ্ড থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় একটি অসাধু চক্র সবসময়ই এর সুযোগ নেয়। সরকার পরিবর্তন হলেও দুষ্টচক্রের কোন পরিবর্তন হয় না। হাত বদল হয় মাত্র।’
ফিরোজ আলম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘হাতিয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কেউ কোনোদিন চেষ্টা করেনি। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করা না হলে এ দ্বীপের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। কেবল যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগের কারণে আমরা স্বাধীনতার আনন্দ এখনো উপভোগ করতে পারিনি। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। এখানে ফেরি চলাচল করলে আমাদের এই দুর্ভোগ অনেক কমে আসবে।’
তিনি বলেন, এ দ্বীপে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা থাকলেও যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের উৎসাহ পাচ্ছেন না।
হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা সৈকত হোসেন বলেন, ‘দেশের অনেক দুর্গম দ্বীপে সরকার চলাচলের জন্য সুগম যাতায়াত ব্যবস্থা করলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে আমাদের হাতিয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। আমরা এই সমস্যার পরিত্রাণ চাই। অদৃশ্য শক্তির হাত থেকে মুক্তি চাই।’
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলা উদ্দিন বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয় । বৈরী আবহাওয়ার সময় মাঝে মধ্যে অসুস্থ রোগী পার করার প্রয়োজন পড়ে। তখন একজন যাত্রীর পক্ষে পুরো ট্রলারের ভাড়া বহন করা সম্ভব হয় না। ওইসময় অন্য যাত্রী ও ট্রলার মালিকরা সুযোগ নিয়ে নদী পারাপার করে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বাসসকে বলেন, হাতিয়ার জনগণের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। এটি নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।