॥ একেএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী ॥
ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ (বাসস): আনোয়ার হোসেন চৌধুরী মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে একটি চাকরির আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিলেন। বড় ভাই দুবাই প্রবাসী ফরহাদ হোসেন চৌধুরী তাই দেখে অবাক হয়ে গেলেন। যেখানে কয়েক বছর আগেও তা সম্পন্ন করতে দুই বা তিন দিন সময় লাগতো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে তখন প্রবাসী ফরহাদ হোসেনের কাছে এটা চমকই বটে। কারণ তিনি দেশের কতখানি উন্নয়ন হয়েছে দুবাইতে বসে সেটা জানতেন না। তিনি শেখ হাসিনার এই বিশেষ উদ্যোগ ও সাফল্যে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমার ছোট ভাই কোনো ঝামেলা ছাড়াই টেলিটকের মাধ্যমে চাকরির আবেদন ফি পরিশোধ করেছে। অথচ কয়েক বছর আগেও আবেদন ফি জমা দেয়া একটি কঠিন কাজ ছিল। তখন ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আবেদন ফি জমা দিতে হতো।”
শুধু আবেদন প্রক্রিয়াতেই নয়, প্রবেশপত্র, বসার ব্যবস্থা ও ফলাফলসহ সংশ্লিষ্ট সব তথ্যই এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার রাজবল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তিনি পরীক্ষার আগের দিন জানতে পারেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা পরদিন সকালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। খবরটি শুনে তিনি হতবাক হয়ে যান। তাই সময় নষ্ট না করে নিকটস্থ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) থেকে প্রবেশপত্রের কপি প্রিন্ট করে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই তিনি চাকরি পেয়েছেন।
বাসসের সাথে আলাপকালে, এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক ডঃ দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, গত এক দশকে সরকারের গৃহীত সেরা উদ্যোগগুলোর অন্যতম হল 'ডিজিটাল বাংলাদেশ। যার লক্ষ্য সুশাসন, আইনের সঠিক ব্যবহার, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে সহযোগিতা প্রদানে আইসিটি সমন্বিত করার মাধ্যমে দেশকে ডিজিটালভাবে উন্নত দেশে রূপান্তর করা।
তিনি জানান, সরকার ইতিমধ্যেই সারা দেশের প্রায় ১১,০০০ অফিসে ই-নথি কার্যক্রম নিশ্চিত করেছে। এছাড়া, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, ইউনিয়ন, জেলা ও বিভাগের ৩৫,০০০টিরও বেশি ওয়েবসাইট 'ন্যাশনাল পোর্টাল' নামে একটি ওয়েবসাইটের আওতায় এসেছে।
মূলত সরকারী কর্মকান্ডে অনলাইন কানেক্টিভিটি, অনলাইন সার্ভিস ডেলিভারি এবং সরকারী কর্মচারীদের ডিজিটাল সাক্ষরতা লাভের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ফলে দেশে ই-গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা উন্নয়নে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সরকারী খাতের কর্মচারীদের মধ্যে ই-সাক্ষরতা ও আইসিটি দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ, ডিজিটাল ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ওপেন-লার্নিং-প্ল্যাটফর্ম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেখার সুযোগ প্রদান করেছে। সরকারী সেবা কর্মীদের ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং আইসিটি দক্ষতাও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।
হুমায়ুন কবির বলেন, এখন সরকারের প্রায় সব কর্মচারীরই ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে এবং তারা তাদের দৈনন্দিন কাজে আইসিটি টুল ব্যবহার করতে পারেন। ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থায় বিগত বছরগুলোতে অর্জিত অগ্রগতির বিষয়টিকে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক দফতর (ইউএনডিইএসএ) যথাযথভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। তারা ২০২০ সালে ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১১৯তম স্থান দিয়েছে।
এই র্যাংঙ্কিং হচ্ছে প্রতি দুই বছর পর পর জাতিসংঘ পরিচালিত জরিপের ফলাফল। ই-গভর্নেন্স ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (ঊএউও) আকারে গ্রেডিং করা হয়েছে। জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের মাধ্যমে ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের অগ্রগতি এতে প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি জানান, সরকার ২০২২ সালে ইজিডিআই র্যাংঙ্কিংয়ে ডাবল ডিজিট অর্জন করার জন্য কাজ করছে। এটুআই সরকারী অফিসগুলোতে বিভিন্ন পর্যায়ে নথির দ্রুত গতিবিধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংস্থার সর্বত্র স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং শাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা জোরদার করার কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করতে কাজ করছে। এ কার্যক্রম সকল সরকারি অফিসে অগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততর ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করবে।