শিরোনাম
ঢাকা, ৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে চাল ও গম মিলে মোট ২১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে ৪ আগস্ট গণমাধ্যমকে দেওয়া এক তথ্য বিবরণীতে এ মজুদের কথা জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে সরকারিভাবে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন গম মজুদ রয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে আরও ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৪ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারিভাবে এ বছর ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ১৯ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় ধান সংগ্রহ ২ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন এবং চাল সংগ্রহ প্রায় ২ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সর্বমোট ৩৩ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে, যা এ যাবৎ কালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সরকারি খাতে প্রায় ৪৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সরকারি খাতে গম আমদানির উৎস বহুমুখীকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করা হয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারি খাতে গম আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে সরকারি ও বেসরকারি খাতে আমদানি বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ লাখ টনেরও বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সক্ষমতা ছিল ২৩ লাখ ৪১ মেট্রিক টন। চলতি অর্থ বছরে মধুপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে ৪টি আধুনিক সাইলো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ায় সরকারি খাদ্যশস্য মজুদের ধারণ ক্ষমতা ২৩ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ক্ষমতা ২৬ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টনে বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এই মজুদকে সন্তোষজনক বলা যাবে না, আবার ঝুঁকিপূর্ণ বলাও ঠিক হবে না। মজুদ আরও বাড়ানো দরকার। এ ব্যাপারে আমাদের বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ টন চাল ও গমা কেনার চুক্তি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট রয়েছে। এ টার্গেট পূরণ হবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি আমদানি করা যেসব চাল ও গম পাইপলাইনে আছে, সেগুলো শিগগিরই আমরা পেয়ে যাব। এছাড়া সম্প্রতি বন্যায় ফসলের যে ধরনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা হয়তো হবে না। এ হিসেবে বলা যায়, এ বছর দেশের খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ভালো।
কর্মকর্তারা আরও জানান, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য খাবার নিশ্চিত করা সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের মজুদ বাড়াতে হচ্ছে। এখন ২২ লাখ টন খাদ্য মজুদের সক্ষমতা আছে। এটাকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া হবে। খাদ্য মজুদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি খুব বেশি প্রয়োজন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে সাতটি সাইলো গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলোর প্রতিটিতে প্রায় ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য রাখা যাবে। এর মধ্যে দুয়েকটি সাইলো গুদাম এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। আগের সরকারের একজন মন্ত্রীর ইচ্ছায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে মালপত্র আনা-নেওয়ার খরচ অনেক বেশি হবে। দাতাগোষ্ঠী ও সরকারি কর্মকর্তারাও রাজি ছিলেন না। সাধারণত এসব সাইলো নির্মাণ করা হয় নদীর পাড়ে বা যেখানে ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু টাঙ্গাইলের পশ্চিমে যমুনা নদী থাকলেও সাইলোটি এমন জায়গায় করা হয়েছে, সেখানে ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো বাহনে মালপত্র পরিবহন করা যাবে না। ময়মনসিংহেও প্রায় একই অবস্থা। সেখানকার সাইলোতে পরে রেলপথ হয়েছে। এগুলো ব্যবহারযোগ্য হলে মজুদ বাড়ানোর সুযোগ হবে।
পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (পিএফডিএস) এর আওতায় খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) কার্যক্রম বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। দ্রব্যমূল্য ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সারাদেশে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে মনিটরিয় কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সময় সরকার ওএমএস কর্মসূচিতে সবজি বিক্রির পরিকল্পনাও করে রেখেছে। প্রয়োজন হলে এএমএস ট্রাকসেলে চাল আটার পাশপাশি কম দামে সবজি বিক্রি করবে। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আলু, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ কিনে নির্ধারিত কিছু এলাকায় খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) করা হবে।
গত ৯ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চিনি আমদানিতে শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে। অপরিশোধিত চিনির আমদানি খরচ প্রতি কেজিতে ১১ টাকা ১৮ পয়সা এবং পরিশোধিত চিনির খরচ ১৪ টাকা ২৬ পয়সা কমানো হয়।