শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): সাম্প্রতিক বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করতে ও তদন্তকাজে সহায়তার জন্য চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।
বিমান বাহিনী আয়োজিত আজ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ‘ঘটনার দিন ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করে এবং একই দিনে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্তকাজে সহায়তার জন্য চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে।’
তেজগাঁও পুরাতন বিমান বন্দর এলাকায় এভিয়েশন এন্ড এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এ আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিমান বাহিনী জরুরি সমন্বয় কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক এয়ার কমডোর মো. মিজানুর রহমান। এ সময় বিমান পরিচালনা পরিদপ্তরের পরিচালক এয়ার কমডোর শহীদুল ইসলাম, বার্ন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও যুগ্ম পরিচালক ডা. মো. মারুফুল ইসলাম ও দিয়াবাড়ি মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখার অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর খাঁন উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম ও উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ‘বিমান বাহিনী প্রধান দুর্ঘটনার পরের দিন এক মিডিয়া ব্রিফিংকালে অনেক প্রশ্ন এবং সংশয়ের উত্তর দিয়েছেন। পরবর্তীতে, বিমান বাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিভিন্ন ধরনের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ সকল কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে গত ২১ জুলাই একজন এয়ার কমোডর পদবির কর্মকর্তার নেতৃত্বে ‘জরুরি সহায়তা কেন্দ্র’ গঠন করা হয়।’
বিমান বাহিনীর কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরে জানানো হয়, জরুরি সহায়তা কেন্দ্র থেকে আহতদের চিকিৎসা, আহতদের অবস্থান, চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য, নিহতদের পরিচয় যাচাই ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ, নিহতদের দাফন ও সৎকার কার্যক্রম সমন্বয়, হাসপাতালে রক্তদাতা প্রেরণ এবং সংগ্রহে সহায়তা এবং যেকোনো জরুরি তথ্য, পরামর্শ ইত্যাদি সহায়তার কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া দুর্ঘটনার পরের দিন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং সিএমএইচ -এ দুটি সমন্বয় সেল গঠন করে যা সার্বক্ষণিক সক্রিয় রয়েছে।
২২ জুলাই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনী প্রধান বার্ন ইনস্টিটিউট ও ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) পরিদর্শন করেছেন।
২৩ জুলাই বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের ফ্যালকন হলে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. জিয়াউল আলম এবং উপাধ্যক্ষসহ ৮ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমন্বয় সভায় দুর্ঘটনা পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম সমন্বয় সাধনের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে পুনরায় নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে যে ভুলবুঝাবুঝি হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সেটা দূর করা সম্ভব হয়।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পরিবারের পাশে থেকে সহমর্মিতা জানাতে বিমান বাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে আহতদের সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সামরিক কায়দায় সম্মান প্রদর্শন এবং বিশেষ দোয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রথমে মানবিকতা, সাহসিকতা ও দায়িত্ববোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী ও শিক্ষিকা মাশুকা বেগমের সমাধিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার পাশাপাশি সামরিক কায়দায় সম্মান জানানো হয়। একই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত নিহত ১৭ জনের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সম্মান প্রদান করা হয়। বিমান বাহিনী প্রধান সস্ত্রীক দুর্ঘটনা ও ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। নিহত শিক্ষার্থীদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
গত ২৫ জুলাই সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় শাহাদাত বরণকারী সকল নিহতদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় বিমান বাহিনীর সকল ঘাঁটি ও ইউনিটের মসজিদসমূহে এবং একই দিনে বাদ আসর সকল ঘাঁটি ও ইউনিটের অফিসারস মেসে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
সংহতি ও সহানুভূতির আন্তরিক নিদর্শন হিসেবে গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পরিচালিত সকল শাহীন স্কুল, বিএএফ হাজী আশরাফ আলী স্কুল, শাহীন ইংলিশ মিডিয়াম ও ব্লো স্কাই স্কুলে শাহাদাতবরণকারী সকলের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও গত ২৬ জুলাই ঢাকা বিএএফ শাহীন কলেজ ও বিএএফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলার অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত দুটি প্রতিনিধিদল উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে শোকবার্তা পৌঁছে দেন।
মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সকল নিহত এবং আহতদের সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানসহ বিমান বাহিনী সর্বদা তাদের পাশে থাকবে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।