বাসস
  ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৮
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৮:৩৪

চিকিৎসকরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৮ জুলাই,২০২৫ (বাসস) : জুলাইয়ে কর্তব্য পালনকারী চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন,‘আপনারা শুধু চিকিৎসক নন, আপনারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক। আপনারা সাহস, মানবতা ও দায়িত্ববোধের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই দুঃসময়ে আপনারা যে সেবা দিয়েছেন, তা আমরা কোনো দিন ভুলবো না’।

সোমবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আহত জুলাই যোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় তিনি একথা বলেন।

বক্তব্যের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,‘ জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ। আমি এ ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। যারা এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা আমাদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান, তাদের পেশার মাহাত্ম্য। যখন চারপাশে শুধু আতঙ্ক, কান্না আর অজানা আশঙ্কা তখন আপনারাই আমাদের আশার আলো। এই কঠিন সময়ে যারা ক্লান্তি ভুলে আহতদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, আমি জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

যুদ্ধের সময়েও আক্রান্ত ও আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করা হয় না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। এর ব্যতিক্রম আমরা দেখেছি এই বাংলাদেশে, চব্বিশের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে। ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু এ দেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বুকে গুলি চালিয়ে থেমে থাকেনি, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যেন কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা না পায়।’

তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ে আমাদের চিকিৎসক যোদ্ধাদের গল্প কোনো যুদ্ধক্ষেত্রের ডাক্তারদের গল্পকেও হার মানায়। রাস্তায় ছাত্রদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মেডিকেলে ঢুকেও তাদের ওপর হামলা হয়েছিল, ডাক্তার-নার্সদের হুমকি-ধামকি, নানা রকমের বাধা দেওয়া হয়েছিল। শত শত ছেলেমেয়েরা অন্ধত্ব বরণ করেছে কারণ তারা সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায়নি।’

ডাক্তার-নার্সরা নিজের জীবন বিপন্ন করে জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়েছেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘নির্দেশ ছিল, আন্দোলনে আহত কাউকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে না। আপনারা পেছনের গেইট দিয়ে আহতদের গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতালে হাসপাতালে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজ, রেজিস্ট্রার খাতাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ডাক্তার-নার্সরা সেসময় নিজেদের জীবন বিপন্ন করে জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়েছিলেন।’

তিনি আরও  বলেন, ‘তারা রোগীর কোনো তথ্য নথিভুক্ত পর্যন্ত রাখেননি, কারণ এসব নথির সূত্র ধরে আহতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল। বিনামূল্যে দিনরাত গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীদের জীবন বাঁচাতে আপনারা সর্বোচ্চ ঝুঁকি দিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। দুই চিকিৎসক বোনকে আমরা দেখেছি নিজ উদ্যোগে গ্যারেজের মধ্যে অস্থায়ী ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা দিয়েছেন, অনেকে নিজেদের ঘরের মধ্যে অস্থায়ী ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা দিয়েছেন।’

ঝুঁকির মধ্যে থেকেও চিকিৎসকরা জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন বলে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা নিজেরা ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন, আপনাদের পরিবার ঝুঁকির মধ্যে ছিল। তবু পাহাড়সম বাধা পার করে আপনারা মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন।’

আহতদের জন্য রক্তের সংকট ছিল, প্রশাসনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করেছেন। আহতদের পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবস্থাপত্রে অন্য নাম, অন্য রোগের তথ্য উল্লেখ করে তাদেরকে পুলিশের কাছ থেকে আড়াল করেছেন। প্রাইভেট ডাক্তাররা স্ব-উদ্যোগে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে গোপনে চিকিৎসা দিয়ে এসেছেন। রক্ত দেয়ার জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ ছিল না, আপনারা নিজেরাই এগুলো ব্যবস্থা করেছেন। আন্টি বায়োটিক, পেইন কিলারের মতো ওষুধও আপনারা নিজেরাই সরবরাহ করেছেন।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির পক্ষ থেকে জুলাইয়ে কর্তব্য পালনকারী সকল স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানান।