বাসস
  ২৩ জুলাই ২০২৫, ২১:২৭

জাপানের সঙ্গে ‘বিশাল’ বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প

ঢাকা, ২৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার জাপানের সঙ্গে একটি ‘বিশাল’ বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। 

চুক্তিটি তার বাণিজ্য নীতির জন্য এক বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মাস শেষ হওয়ার আগেই চুক্তিটি চূড়ান্ত করার জন্য দুই দেশ আলোচনায় ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ১ আগস্টের মধ্যে যেসব দেশ ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি করবে না, তাদের ওপর তিনি ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপ করবেন। 

টোকিও থেকে এএফপি জানিয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করা পাঁচটি দেশের একটি হয়েছে। 

অন্য চারটি দেশ হলো ব্রিটেন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন। এর মাধ্যমে ট্রাম্পের ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’ করার প্রতিশ্রুতির অংশ পূরণ হলো।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন যে, আমরা জাপানের সঙ্গে একটি বিশাল চুক্তি করেছি। সম্ভবত এটি আমাদের করা সবচেয়ে বড় চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। যার ৯০ শতাংশ লাভ যুক্তরাষ্ট্র পাবে। 

যদিও বিনিয়োগের প্রকৃত খুঁটিনাটি তিনি জানাননি। 

তবে তিনি দাবি করেন যে, এই চুক্তি ‘লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান’ সৃষ্টি করবে।

চুক্তি না হলে, ১ আগস্ট থেকে জাপানি রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ  থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ  করার পরিকল্পনা ছিল। 

ইতোমধ্যেই জাপানি গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ  শুল্ক আর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ  শুল্ক কার্যকর ছিল।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ঘোষণা করেন, চুক্তির ফলে এখন থেকে জাপানি গাড়ির ওপর শুল্ক কমে ১৫ শতাংশ  হয়েছে। এতে বাজারে জাপানি গাড়ির চাহিদা বেড়েছে এবং টয়োটা ও মিৎসুবিশির শেয়ারদর প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

ইশিবা বলেন,  কোনো পরিমাণসীমা ছাড়াই আমরা বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক কমালাম। 

তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তিটি এমনভাবে হয়েছে, যাতে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হয় এবং উভয় দেশের জন্য উপকারী হয়।’

চাল আমদানি

চুক্তির আওতায় জাপানকে চালসহ কিছু কৃষিপণ্য আমদানি উন্মুক্ত করতে হবে, যা দেশটিতে একটি সংবেদনশীল ইস্যু। জাপান আগে থেকেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) চুক্তির অধীনে ৭ লাখ ৭০ হাজার টন শুল্কমুক্ত চাল আমদানি করে। 

ইশিবা জানান, এবার এরমধ্যে আরও বেশি আমেরিকান চাল আমদানি করা হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এই চুক্তিতে আমাদের কৃষি খাতকে কোনোভাবেই বিসর্জন দেওয়া হয়নি।’

জাপানের বৈদেশিক বাণিজ্য কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তাৎসুও ইয়াসুনাগা চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বিনিয়োগ ও রপ্তানির যে অনিশ্চয়তা ছিল, এই চুক্তি তা দূর করেছে।’ 

তবে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে এই চুক্তি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

৮০ বছর বয়সী এক ভোটার নাওমি ওমুরা বলেন, ‘জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সামনে যথেষ্ট শক্ত অবস্থান নিতে পারছে না, এটা হতাশাজনক।’

৮১ বছর বয়সী আরেকজন ভোটার তেতসুও মোমিয়ামা বলেন, ‘ইশিবার সময় শেষ, এখন তার বিদায় নেওয়ার উপযুক্ত সময়।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্বাচনী পরাজয়ের পর ইশিবা শিগগিরই পদত্যাগ করতে পারেন।

বহু প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি শেষ করার চাপের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। 

ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গেও নতুন চুক্তি করেছেন তিনি। যেখানে খনিজ রপ্তানির বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে এবং শুল্ক হার কমিয়ে আনা হয়েছে। 

তবে বড় বাণিজ্য অংশীদার যেমন চীন, কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ঘোষণা করেছেন, তিনি আগামী সপ্তাহে স্টকহোমে চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এ বছর একে অন্যের রপ্তানির ওপর পাল্টাপাল্টি শতকরা তিন অঙ্কের হারে শুল্ক আরোপ করে। 

তবে মে মাসে জেনেভায় এক আলোচনায় তারা তা সাময়িকভাবে কমিয়ে ১২ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রাখতে রাজি হয়।