বাসস
  ২২ জুলাই ২০২৫, ১২:০৪
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ১৫:৫৮

বিমান দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭; মরদেহ হস্তান্তর ২০ জনের 

মঙ্গলবার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রাজধানীর দিয়াবাড়িতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ও নিহতের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান প্রেস ব্রিফিং করেন। ছবি: পিআইডি

ঢাকা, ২২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। বাকি ২০ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান মঙ্গলবার সকালে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। 

তিনি জানান, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৭৮ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শনাক্ত হওয়া মরদেহের পরিচয় হল, ফাতেমা আক্তার (৯), পিতা: গনি শেখ, বাগেরহাট; সামিউল করিম (৯), বরিশাল; রজনী ইসলাম (৩৭), কুষ্টিয়া; মেহনাজ আফরিন হুরায়রা (৯), টাঙ্গাইল; শারিয়া আক্তার (১৩), পিতা: রফিক মোল্লাহ, ঢাকা; নুসরাত জাহান আনিকা (১০), ঢাকা; সাদ সালাউদ্দিন (৯), পিতা: মুকুল সালাউদ্দিন, মিরপুর, ঢাকা এবং সায়মা আক্তার (৯), পিতা: শাহআলম, গাজীপুর।

নিহতদের মধ্যে আরো রয়েছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাহেরিন চৌধুরী (৪৬) এবং শিক্ষার্থী এবি শামীম (১৪), আফনান (১৪) ও তানভীর (১৪)।

বিমান বাহিনীর পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। তার মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

আইএসপিআর নিশ্চিত করেছে, দুর্ঘটনায় ১৭১ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৫ জন গুরুতর। এছাড়া উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া দু’জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী আহত হয়েছেন। তবে তারা বিপদমুক্ত বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে।

সোমবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

বিমান বিধ্বস্তের প্রেক্ষাপট :

সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলার বিমান বাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যুদ্ধবিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিস্তারিত তদন্ত শেষে কারণ জানানো হবে বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।

দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে, এফটি-৭ বিজিআই জেটটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়।

আইএসপিআর জানায়, পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম প্রাণপণ চেষ্টা করেন যাতে বিমানটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পরিবর্তে কম জনবসতিপূর্ণ স্থানে বিধ্বস্ত হয় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়।

সরকারি পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া :

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

অন্যদিকে, মঙ্গলবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে একটি জরুরি হটলাইন চালু করা হয়েছে। সেটির নাম্বার হল: ০১৯৪৯-০৪৩৬৯৭।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছেন।

সরকার সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।