বাসস
  ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৩

বেরোবিতে শহীদ পরিবারের প্রতি ব্যতিক্রমী শ্রদ্ধা: মঞ্চের নিচে বসলেন উপদেষ্টারা

ছবি: বাসস

রংপুর, ১৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) আজ অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। ‘জুলাই শহীদ দিবস’-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় শহীদ আবু সাঈদসহ ২২ শহীদ পরিবারের সদস্যরা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন, আর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা বসেন নিচের সারিতে।

শহীদদের পরিবারকে মঞ্চে বসিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিচে বসার এই নজিরবিহীন দৃশ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন ও গভীর দেশপ্রেমের পরিবেশ সৃষ্টি করে। হাজারো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অতিথিদের চোখে তা হয়ে ওঠে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগ স্মরণে ‘জুলাই শহীদ দিবস’-২০২৫ পালন করে। একইসঙ্গে এই দিনে স্মরণ করা হয় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া বীর সন্তানদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলীর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের পিতা মো. মকবুল হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শহীদদের বিধবা স্ত্রীরা, পিতা-মাতা ও ঘনিষ্ঠ স্বজনেরা।

অন্যদিকে দর্শকসারিতে অতিথি হিসেবে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এবং পানি সম্পদ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, ছয়টি অনুষদের ডিন, প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান, রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রাবিউল ফয়সালসহ বিশিষ্টজনেরা।

শহীদ আবু সাঈদের গ্রামের বাড়ি বাবনপুরে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে দিনের সূচনা হয়। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে উপাচার্য ড. মো. শওকত আলীর নেতৃত্বে শিক্ষক-কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।

পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে কালো ব্যাজ ধারণ করেন এবং সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বিশাল শোকর‌্যালি বের করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ গেট থেকে শুরু হয়ে র‌্যালিটি শহরের মডার্ন মোড় প্রদক্ষিণ করে শহীদ আবু সাঈদ গেটে এসে শেষ হয়। এতে অংশ নেন হাজারো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

র‌্যালি শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ আবু সাইয়েদ গেট ও জাদুঘর এবং শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শহীদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মারক নির্মাণকে ইতিহাসচর্চা ও প্রজন্ম-সংলাপের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটোরিয়ায় শহীদ স্মরণে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির পরিসমাপ্তি ঘটবে।