বাসস
  ১৩ জুন ২০২৫, ২২:৩৪
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ২২:৪৫

পাচার অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশগ্রহণ গভর্নরের

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ফাইল ছবি

লন্ডন, ১৩ জুন, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে গত ১০ থেকে ১৩ জুন লন্ডন সফর করেন।

সফরকালে গভর্নর আলাদাভাবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন, যা নীতিনির্ধারণী বিষয়সমূহে সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।

১১ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান (দুদক) ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সঙ্গে গভর্নর যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইমস এজেন্সি (এনসিএ) পরিদর্শন করেন এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সমন্বয় কেন্দ্রের (আইএসিসিসি) প্রধান ড্যানিয়েল মারফিসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন।

গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাসেট রিকভারি টাস্কফোর্সের সঙ্গে আইএসিসিসির ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং ১১টি যৌথ তদন্ত দলের (জেআইটি) জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রশংসা করেন, যা ১১টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সম্পদ পুনরুদ্ধার মামলার তদন্তে নিয়োজিত।

তিনি যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ জব্দ এবং গত মাসে বেক্সিমকো গ্রুপের শায়ান রহমান ও শরিয়ার রহমানের ৯০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ জব্দের জন্য এনসিএর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

গভর্নর আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এনসিএ এবং আইএসিসিসির কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরও গভীর সহযোগিতা পাওয়া যাবে। যুক্তরাজ্যের ২৫০ মিলিয়ন সম্পদ জব্দের সিদ্ধান্ত অন্যান্য অর্থপাচারের গন্তব্য দেশগুলোকে বাংলাদেশের সম্পদ পুনরুদ্ধারে অনুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

এনসিএ পরিদর্শনের পর গভর্নর বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা ডিএলএ পিপার আয়োজিত অ্যাসেট রিকভারি বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

বৈঠকে অমনি ব্রিজওয়ে ও বেঞ্চওয়াক ক্যাপিটালের মতো বৈশ্বিক মামলা অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান এবং আলভেরেজ এন্ড মার্শাল ও সভরেন এডভাইজারি বা স্টার্ট কমস-এর মতো তদন্ত সংস্থা ইউনিটাস গ্লোবালের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

২০২৫ সালের মধ্যে ৩০টি মামলার জন্য ১০০ মিলিয়ন লিটিগেশন ফান্ডিং সংগ্রহের বিষয়ে তারা গভর্নরের সঙ্গে একটি রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করেন।

অংশগ্রহণকারীরা দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এনডিএ স্বাক্ষর করে তাদের অপরিশোধিত ঋণের তথ্য বিনিময় এবং সম্পদ অনুসন্ধান ও আইনগত কার্যক্রম শুরু করার ওপর গুরুত্ব দেন।

গভর্নর গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তাবিত একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল (এসপিভি) গঠনের প্রতি সমর্থন জানান, যাতে যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোতে সম্পদ পুনরুদ্ধারের আইনি দাবি কার্যকরভাবে পরিচালিত হয় এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব থেকে এই প্রক্রিয়াকে রক্ষা করা যায়।

এছাড়াও, গভর্নর বিশ্বের বৃহত্তম অ্যাসেট ম্যানেজার ব্ল্যাকরকের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নের অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজারে আরও বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান।

তিনি লন্ডনের লর্ড মেয়র ও শীর্ষস্থানীয় ফিনটেক কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করেন, যেখানে লন্ডনের ফাইন্যান্স সেক্টরের সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয় আলোচনা হয়।

গভর্নর সম্মানিত লর্ড মেয়রকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

এছাড়াও তিনি লন্ডনের কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ পরিদর্শন করেন, যেখানে তিনি রেমিটেন্স প্রক্রিয়া কীভাবে আরও সহজ ও কার্যকর করা যায় তা বোঝার চেষ্টা করেন এবং রেমিটেন্স প্রবাহে চলমান ইতিবাচক গতি বজায় রাখার উপায় খুঁজে দেখেন।