বাসস
  ১২ জুন ২০২৫, ১৮:০৭
আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ১৮:০৮

বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমেছে: আইএলও-ইউনিসেফ

প্রতীকী ছবি

ঢাকা, ১২ জুন, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফ। বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। এতে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু 
ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরে এসেছে।

‘চাইল্ড লেবার : গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২৪, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত এক দশকে স্কুলে ভর্তি হার বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। যদিও শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নির্মূলের পথ এখনও দীর্ঘ, তবু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের সরিয়ে আনার এই ইতিবাচক প্রবণতা প্রশংসার দাবিদার।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩ সালের তুলনায় বাংলাদেশে ক্ষতিকর কাজে নিযুক্ত শিশুদের অনুপাতও স্থিতিশীল রয়েছে। এই হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। তবে সামগ্রিক শিশুশ্রমের হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “আমরা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনকে স্বীকৃতি দিই। এটি প্রমাণ করে যে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা, সমাজের সচেতনতা এবং পরিবারকেন্দ্রিক সহায়তা শিশুশ্রম নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “তবে এখনও শিশুশ্রমের মোট পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকায় আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়নি। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে এবং শিশুশ্রম প্রতিরোধে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।” 

বিশ্বব্যাপী কৃষি খাতেই শিশুশ্রমের হার সবচেয়ে বেশি, যা ৬১ শতাংশ। বাংলাদেশেও অনানুষ্ঠানিক খাত, বিশেষ করে কৃষি, গৃহস্থালি ও হালকা শিল্পে শিশুরা নিযুক্ত থাকে।

এসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি এবং শিশুদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

আইএলও বাংলাদেশ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুঞ্জন ডালাকোটি বলেন, “শিশুশ্রমের হার কমলেও কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম বন্ধে আইএলও কনভেনশন ১৩৮ ও ১৮২ এর বাস্তবায়ন আরো জোরদার করতে হবে।”

প্রতিবেদনে আইএলও ও ইউনিসেফ একযোগে সরকার ও অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে— দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের চিহ্নিত করে সহায়তা প্রদান, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ, তরুণদের জন্য সম্মানজনক কর্মসংস্থান তৈরি, সাপ্লাই চেইনে শিশুশ্রম নির্মূলে আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ইতিবাচক প্রবণতা বজায় রাখতে হলে সরকার, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। কারণ শিশুশ্রম কেবল সামাজিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়, যার সমাধানে মানবিক এবং নীতিগতভাবে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করাই হবে মূল চাবিকাঠি।