বাসস
  ০৬ জুন ২০২৫, ২০:২৬

হজের সমাপ্তি, ঈদুল আজহার সূচনা

ঢাকা, ৬ জুন, ২০২৫ (বাসস): শুক্রবার (৬ জুন) হজের শেষ দিকে হাজিরা 'শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ'-এর প্রতীকী রীতি পালন করেছেন। এদিন মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহার সূচনাও উদ্‌যাপিত হয়েছে।

মিনা থেকে এএফপি জানায়, দিনের আলো ফোটার আগেই ১৬ লাখেরও বেশি হজযাত্রী মক্কার উপকণ্ঠের মিনার উপত্যকায় শয়তানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত তিনটি কংক্রিটের প্রাচীরে সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করেন।

মিনার তাবু শহর থেকে হাজিরা সূর্যোদয়ের আগেই রওনা দেন এবং ছায়া ও ঠান্ডা আবহাওয়া থাকায় রীতিটি পালন সহজ হয়।

এই রীতি সেই ঘটনার স্মারক, যখন আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম (আ.) তার পুত্রকে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হলে শয়তান তাকে বাধা দিতে চেয়েছিল।

মিসরের ৩৪ বছর বয়সী ওয়ায়েল আহমেদ আবদেল কাদের বলেন, 'মিনায় আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল সহজ-সরল। আমরা প্রবেশ করলাম এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যেই 'জামারাতে' শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ সম্পন্ন করলাম।'

গিনির হাজী হাওয়াকিতা বলেন, 'আমি যখন পাথর নিক্ষেপ করেছি, তখন স্বস্তি অনুভব করেছি। আমি সত্যিই গর্বিত।'

এর আগের দিন হাজিরা আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে প্রার্থনা ও কোরআন তেলাওয়াতে অংশ নেন। অনেকেই তীব্র গরমের মধ্যেও ৭০ মিটার উঁচু পাহাড়ে আরোহণ করেন, যেখানে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) শেষ খুতবা দিয়েছিলেন। তবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘরের ভেতরে থাকার সরকারি সতর্কতার পর দুপুর নাগাদ উপস্থিতি কিছুটা কমে যায়।

এই বছরের হজে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাপদাহ মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অবৈধ হাজিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছে। এর ফলে মক্কা ও আশপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম ভিড় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জোর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

২০২৪ সালের হজে ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় ১,৩০১ জন হাজির মৃত্যুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মৃতদের বেশিরভাগই ছিলেন অবৈধ হাজি, যাদের আবাসন বা নিরাপত্তামূলক সেবা ছিল না।

কোভিড-১৯ মহামারির ২০২০-২০২২ সাল বাদ দিলে গত তিন দশকে এবারই হজযাত্রীর সংখ্যা সবচেয়ে কম। গত বছর হজে অংশ নিয়েছিলেন ১৮ লাখ মুসলমান।

হজের অনুমতিপত্র (পারমিট) কোটা ভিত্তিতে দেশগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং লটারির মাধ্যমে ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। তবে পারমিট পাওয়ার পরও উচ্চ খরচের কারণে অনেকেই বিনা অনুমতিতে হজ পালনের চেষ্টা করেন, যদিও এতে গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের ঝুঁকি থাকে।

২০১৫ সালে মিনার এই রীতির স্থানেই ভয়াবহ পদদলনের ঘটনা ঘটে, যাতে ২,৩০০ জনের বেশি হাজির মৃত্যু হয়। এটি হজের ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী বিপর্যয়।

প্রতি বছর হজ ও উমরাহ থেকে সৌদি আরব বিলিয়ন ডলার আয় করে। এ দুটি ধর্মীয় সফর সৌদি বাদশাহর জন্য গৌরবের বিষয়, যিনি মক্কা ও মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক হিসেবে পরিচিত।

হজের সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই ঈদুল আজহা শুরু হয়, যা পশু কোরবানির মাধ্যমে উদ্‌যাপিত হয়। সাধারণত ছাগল, ভেড়া, গরু বা উট কোরবানি দেওয়া হয়।