শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ চীনে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে আম রপ্তানি শুরু করেছে জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, এটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বেইজিং সফরের প্রত্যক্ষ ফলাফল।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ প্রথম চালানের উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, নতুন বাণিজ্য সুবিধা কাঠামোর আওতায় আম চীনের বাজারে শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলায় এবং কৃষি রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
হুনান প্রদেশের চাংশায় গমনকারী বিমান চালানের বিদায় অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি কেবল শুরু। আমরা বাংলাদেশি কৃষি পণ্যের জন্য জাপান এবং ইউরোপে নতুন বাজার উন্মুক্ত করার জন্য কাজ করছি।’
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক চালানে ১০ টন তাজা আম রয়েছে। বাংলাদেশ এই মৌসুমে চীনে ১০০ টন পর্যন্ত আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
চীন দূতাবাসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চীনা ক্যারিয়ার এসএফ এক্সপ্রেসের একটি মালবাহী বিমান আম বহনকারী ফ্লাইটটি পরিচালনা করছে।
অনুষ্ঠানে যোগদানকারী ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এই মাসের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের ফলাফল বাস্তবায়নে এই চালানটিকে একটি ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এটি কেবল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের গভীরতাই নয় বরং চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতার পারস্পরিক লাভজনক এবং উভয় পক্ষের সমজয়ের প্রতিফলনও প্রতিফলিত হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমর্থন এবং সমতার নীতিগুলি বজায় রাখতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, একই সাথে ডব্লিউটিও-এর মতো বহুপাক্ষিক কাঠামোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা এবং সমন্বিত শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খল বিকাশ করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও নিশ্চিত করেছেন, চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাও এই মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর করবেন। তিনি ১০০ টিরও বেশি চীনা কোম্পানির একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন, যা বাংলাদেশে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় চীনা ব্যবসায়িক মিশন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এটি উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য আরও সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণ, চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতায় আরও ফলপ্রসূ ফলাফল অর্জনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে এবং এর ফলে আমাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে।’
উপদেষ্টা বশির উদ্দিন আসন্ন সফরের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ওই সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, চীন কাঁচা চামড়া রপ্তানিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
শেখ বশির উদ্দিন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বেও রয়েছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক অবকাঠামোগত এবং নীতিগত সংস্কারের পর দেশের বিমানবন্দরগুলিতে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি খরচ ইতোমধ্যেই ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, চীনে আম রপ্তানি শুরু করাকে বাংলাদেশের কৃষি-রপ্তানি সম্ভাবনার ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং প্রধান অংশীদারদের সাথে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততায় সরকারের বৃহত্তর কূটনৈতিক সাফল্যের প্রতিফলন ঘটেছে।