বাসস
  ১২ মে ২০২৫, ২০:১৭

শ্রম সংস্কারের অগ্রগতি পশ্চিমা কূটনীতিকদের অবহিত করলেন লুৎফে সিদ্দিকী

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী আজ ঢাকায় শীর্ষস্থানীয় পশ্চিমা কূটনীতিকদের সাথে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

ঢাকা, ১২ মে, ২০২৫ (বাসস): অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী আজ পশ্চিমা দেশগুলোর শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে তিনি গত আট মাসে শ্রমখাত সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আইএলও’র রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় কারিগরি বিশেষজ্ঞ এবং শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকে আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর প্রথমবারের মতো সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার পূর্ণাঙ্গ সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, গত আট মাসে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, আইএলও রোডম্যাপ কেবল একটি নির্দেশিকা নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতি। প্রক্রিয়া ও  ফলাফল উভয় দিক থেকেই এটি সঠিকভাবে অর্জনের জন্য আমরা সময়, শক্তি ও সদিচ্ছাকে কাজে লাগাচ্ছি।

ত্রিপক্ষীয় অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের একত্রিত করার জন্য লুৎফে সিদ্দিকী শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ও নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

শ্রম সচিব  এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সালের জুলাই মাসে শ্রম আইন সংশোধন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ প্রক্রিয়াটিকে ‘অভূতপূর্ব’  অভিহিত করে বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি,  অনেক সামাজিক সংলাপ হয়েছে এবং আমরা এটি জরুরিভিত্তিতে করার প্রশংসা করছি।

তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই খসড়া আইনটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি এবং
দৃশ্যমান উন্নতির দিকে নজর রাখছি। এটি সম্পন্ন হলে ইইউ বাজারে দেশের পণ্য ও সেবার অব্যাহত প্রবেশাধিকারে প্রভাব ফেলবে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের অধীনে এই গতিকে স্বাগত জানাই এবং অতীতের লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা দেখতে চাই।

কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত সম্পন্ন কাজের প্রশংসা করি এবং আইএলও রোডম্যাপকে সমর্থন করি। এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে এটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টি অবশ্যই শক্তিশালী শ্রম মান দ্বারা সমর্থিত হতে হবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি নিয়ে কাজ করায় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিয়ানেন বলেন, আমরা সংশোধিত শ্রম আইন প্রণয়নের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনটি এমনভাবে করা, যেন তা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেয়।

আইন সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, একটি দল অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে এই বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।

লুৎফে সিদ্দিকী এ সময় কূটনীতিকদের শেখ হাসিনার শাসনামলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র, শ্রম এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, আদালতে অচলাবস্থা এড়াতে উন্নত বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা এবং শ্রম পরিদর্শকের স্বল্পতার বিষয়ে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, এটি কেবল একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। শ্রম অধিকার এখন বাজারে প্রবেশাধিকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক এজেন্ডাসহ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত। আমাদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

কূটনীতিকরা যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেই শ্রমখাতের সংস্কার এবং এর বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। অনেকেই বাংলাদেশে চলমান সংস্কারের সমর্থনে তাদের দেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন করার একটি অনন্য সুযোগ পেয়েছ বলে জানান লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি জানান, শ্রম আইনের সংশোধনের বিষয়টি আইএলও গভর্নিং বোর্ডে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছ।