বাসস
  ০১ মে ২০২৫, ১৬:০০
আপডেট : ০১ মে ২০২৫, ১৬:২৭

ভারত ও পাকিস্তানকে ‘উত্তেজনা হ্রাসের’ আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১ মে, ২০২৫ (বাসস): কাশ্মীরে এক প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি জানিয়েছে, উভয় পক্ষই রাতভর সীমান্তে আবারো গুলি বিনিময় করেছে। 

পাকিস্তানের মুজাফফরাবাদ থেকে এএফপি আজ এই খবর জানায়।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ায় বন্দুক হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সেনাবাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা’ দিয়েছেন।

এই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে ইসলামাবাদ বলেছে, তাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ আছে  ভারত এখন একটি আসন্ন সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে এবং তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ‘যেকোনো আগ্রাসনের দাঁতভাঙ্গা  জবাব দেওয়া হবে।’

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গতকাল বুধবার গভীর রাতে ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক এস. জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে আলাদাভাবে ফোন করেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, রুবিও ‘এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন’ এবং ‘দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে পাকিস্তানের সাথে কাজ করতে ভারতকে উৎসাহিত করেছেন।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার এই আহ্বানের পর বলেছেন হামলার ‘অপরাধী, সমর্থক এবং পরিকল্পনাকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

বৃহস্পতিবার  নয়াদিল্লি ভারী সামরিক নিয়ন্ত্রণ রেখা, কার্যত সীমান্তে উভয় পক্ষের মধ্যে টানা সপ্তম রাতে ছোট অস্ত্রের গুলিবর্ষণের খবর দিয়েছে।

- ‘নিরন্তর ভয়’ -

প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিভক্ত, যারা বিতর্কিত এই ভূখণ্ড নিয়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়েছে। 

পাকিস্তানি পক্ষের যুদ্ধবিরতি রেখার কাছে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ বাস করে। যেখানে বাসিন্দারা সহজ, মাটির দেয়াল ঘেরা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার প্রস্তুত করছে,  যদি তাদের সামর্থ্য থাকে তবে কংক্রিট দিয়ে শক্তিশালী করা হবে।

নিয়ন্ত্রণ রেখার চাকোঠির ৪৪ বছর বয়সী দোকানদার ইফতিখার আহমেদ মীর এএফপি’কে বলেছেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমরা ক্রমাগত আতঙ্কের মধ্যে বাস করছি, বিশেষ করে আমাদের শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে।’ 

তিনি বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত থাকি তারা স্কুল শেষ করে ঘুরে বেড়াবে নাকি সরাসরি বাড়ি ফিরে আসবে।’
পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের প্রধান শহর মুজাফ্ফরাবাদের জরুরি পরিষেবা কর্মীরাও স্কুলছাত্রীদের ভারত আক্রমণ করলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছেন।

১১ বছর বয়সী আলী রাজা বলেছেন, ‘আমরা শিখেছি কীভাবে আহত ব্যক্তিকে পোশাক পরতে হয়, কীভাবে কাউকে স্ট্রেচারে করে বহন করতে হয় এবং কীভাবে আগুন নেভাতে হয়।’

- ট্যাট ফর ট্যাট আগ্রাসন -

কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বছরের পর বছর ধরে সবচেয়ে মারাত্মক এই হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক সমালোচনা ও বহিষ্কারের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারতীয় পুলিশ জড়িত থাকার সন্দেহে তিনজন ব্যক্তির নামে ওয়ান্টেড পোস্টার প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে দুইজন পাকিস্তানি এবং একজন ভারতীয়। তারা পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য বলে তারা দাবি করে। অবশ্য জাতিসংঘ এই সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

তারা প্রতিটি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের জন্য তথ্যের জন্য দুই মিলিয়ন রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছে এবং আক্রমণকারীদের সাথে জড়িত সন্দেহে যে কাউকে খুঁজে বের করার জন্য বিপুলসংখ্যক লোককে আটক করেছে।
ইসলামাবাদ ভারতীয় বিমানের আকাশসীমা অতিক্রম নিষিদ্ধ করার পর বুধবার নয়াদিল্লি পাকিস্তানি বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের সহিংস অবসানের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান হিমালয় অঞ্চল নিয়ে লড়াই করে আসছে।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিদ্রোহীরা ১৯৮৯ সাল থেকে স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সাথে একীভূত হওয়ার দাবিতে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে।

ভারত শাসিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি ছিল ২০১৯ সালে পুলওয়ামায়। তখন একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বিস্ফোরক ভর্তি একটি গাড়ি নিরাপত্তা বাহিনীর একটি কনভয়ে ধাক্কা দিলে ৪০ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়।

এর ১২ দিন পর ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানি ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়।