শিরোনাম
ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আজ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়।
আইএসপিআর আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে যথাযথ তদন্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের সনাক্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
এতে আরো বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতার গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০), পিতা: মৃত নুর নবী নামক একজন যুবক নিহত হয়। পরবর্তীকালে সদর থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফ (মূল)-এর কতিপয় সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলি করে।
এই প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ৬ জন আহত হলে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরবর্তীকালে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশেপাশের এলাকাসমূহে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সাথে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজনাকর করে তুলে।
দ্রুততার সাথে খাগড়াছড়ি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সকল উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সকল পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতে বলা হয়।
একই রাতে (১৯ সেপ্টেম্বর ) খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল একজন মুমূর্ষ রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছলে অবস্থানরত উত্তেজিত জনতা ইউপিডিএফ (মূল)-এর নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। এক সময় ইউপিডিএফ-এর সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করলে আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এ সময় ৩ জন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।
একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের ওপর হামলা করে এবং তাদের লাঠিপেটা করে। সেই সাথে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফ-এর নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেডের অফিসে ভাঙচুর করে।
এদিকে আজ শুক্রবার সকালে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে ‘সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ জেলা সদরের রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮’শ থেকে এক হাজার উত্তেজিত জনতা একটি মিছিল বের করে বনরূপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয়।
এরপর বনরূপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি-অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল ও বেশকিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে করে উভয় পক্ষের বেশকিছু লোকজন আহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।