বাসস
  ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:১১
আপডেট  : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:২১

দারিদ্র্যের ভয় ভূতের ভয়, একে দূর করতে হলে সবাইকে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে : ড. আতিউর রহমান

ঢাকা, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস) : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভণর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান দারিদ্র্যের ভয়কে ‘ভূতের ভয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এই ভয় দূর করতে হলে সমাজের সবাইকে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। 
তিনি বলেন, “বাচ্চারা রাতে একা ঘরে ভূতের ভয় পায়, কিন্তু  অনেকের সাথে থাকলে ভূতের ভয় পায়না। দারিদ্র্য হচ্ছে তেমনি এক ভূত। তাই দারিদ্র্য দূর করতে হলে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।” 
‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আজ এসব কথা বলেন। 
এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ (এডাব) ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) যৌথভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মাণিক মিয়া মিলনায়তনে  আজ সকালে এ সভার আয়োজন করে। 
এডাবের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ইকোনমিকস রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি ও বাংলা ভিশনের সাবেক বার্তা সম্পাদক শারমিন রিনভী এবং গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থা’র নির্বাহি পরিচালক ও এডাব-এর  কোষাধ্যক্ষ মাসুদা ফারুক রত্বা। 
দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, “একটা সময় ছিলো যখন বাংলাদেশের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই ঠিকমতো খেতে পারতো না, একটি কাপড়ের বেশি পড়তে পারতো না, শীতবস্ত্র ছিলো না, পায়ে জুতো ছিলোনা, বেশির ভাগই কুঁড়ে ঘরে থাকতো। সেই জায়গাটা অনেক বদলেছে। বদলটা কোন একা মানুষ করতে পারেনি। সবাই মিলেই আমরা করেছি।  সেখানে রাষ্ট্র ছিলো, বাজার ছিলো, সামাজিক সংগঠন ছিলো। রাষ্ট্র যদি সামাজিক সংগঠনকে কাজ করার  সুযোগ না দিতো তাহলে রাষ্ট্রকেই এটি করতে হতো। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই এটি হয়েছে। ” 
যারা বাংলাদেশের ‘উন্নয়ন সূচক’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, দারিদ্র্য কমেছে সেটা উপলব্ধি করার জন্য আমাদের পরিসংখ্যান দেখার প্রয়োজন নেই।  তাই এই সত্যগুলো মেনে নেয়াই ভালো। যতটুকু আমরা পেয়েছি সেটুকু স্বীকার করে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সমস্যগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবেলা করতে হবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সমবায় নীতি’র উল্লেখ করে উন্নয়ন সমুন্নয়ের চেয়ারপারসন ড. আতিউর বলেন, “আমাদের উন্নয়নের মূল কেন্দ্র কৃষিখাতের উন্নয়ন। কৃষিই আমাদের টিকিয়ে রেখেছে। কৃষির প্রবৃদ্ধি ১% হলে দারিদ্র্য ৪% কমে যায়। তাই কৃষিকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। ”  
তবে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে তাতে কৃষি উপকরণেরও দাম বাড়ছে। যা আমাদের বিদেশ থেকেই আমদানি করতে হয়। ফলে কৃষি উৎপাদনের ব্যয়ও বাড়ছে। এক্ষেত্রে কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে হলে কৃষি পণ্যের উচ্চমূল্য মেনে নিতে হবে।  তিনি স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে আরো বেশি নজর দেয়া জরুরী বলে উল্লেখ করেন। 
অনুষ্ঠানে বক্তারা দেশের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফিতি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যখাতের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা দারিদ্র্য বিমোচনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগ ও অবদানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, দারিদ্র্য কমাতে হলে সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে।  স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরো গভীর দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। সমাজের মনের দারিদ্র্য দূর করা প্রয়োজন।   
এডাব পরিচালক এ কে এম জসীম উদ্দিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সিনিয়র সাংবাদিক শামীমা চৌধুরী এলিস, মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের মহাসচিব ও  বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর সিনিয়র সহ-সম্পাদক খায়রুজ্জামান কামাল , জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাহি পরিষদ সদস্য শাহনাজ বেগম পলি,  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডাবের কর্মসূচি পরিচালক কাউসার আলম কনক এবং স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি এনামুল কবীর রূপম।