শিরোনাম

ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রতিরোধে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংসদ সদস্য পদের প্রার্থীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগের লক্ষ্যে সরকার নীতিমালা প্রণয়ন ও জারি করেছে।
এটি রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগ নীতিমালা ২০২৫ নামে অভিহিত হবে। এতে বলা হয়- সরকার স্বীকৃত বা অনুমোদিত রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, নির্বাচন কমিশনে বৈধভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল ও গৃহীত জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, সরকার স্বীকৃত বর্তমান বা সাবেক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তি, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী কোন ব্যক্তি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ, ‘রিটেইনার’ অর্থ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ও অনুমোদিত সশস্ত্র ব্যক্তি প্রাধান্য পাবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকির ভিত্তিতে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান ও রিটেইনার নিয়োগ অনুমোদন, রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত সশস্ত্র বাহিনী গঠন প্রতিরোধ, নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন রোধ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা হবে।
এতে আরো জানানো হয়- এই নীতিমালার বাস্তবায়ন নিম্নোক্ত আইন ও নীতিমালার আলোকে করা হবে-আগ্নেয়াস্ত্র আইন, ১৮৭৮, আগ্নেয়াস্ত্র বিধিমালা, ১৯২৪, দণ্ডবিধি, ১৮৬০, ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮, নির্বাচন কমিশন জারিকৃত আচরণবিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত জারীকৃত নীতিমালা।
আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স সংক্রান্ত বিধান-
লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্যতা : সরকার স্বীকৃত রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে হবে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থা) যাচাইকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি বিদ্যমান থাকতে হবে, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা থাকতে হবে, অস্ত্র সংরক্ষণের নিরাপদ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এই নীতিমালার অধীনে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে এই সংক্রান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারিকৃত অন্যান্য নীতিমালা ও বিধান প্রযোজ্য হবে। তবে ব্যক্তিগত আয়কর প্রদান সংক্রান্ত অংশ শিথিলযোগ্য হবে। শুধু আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সীমিত ক্যালিবারের (এন পি বি) অস্ত্র, একাধিক অস্ত্রের লাইসেন্স অনুমোদিত হবে না, স্বয়ংক্রিয় বা সামরিক অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান যোগ্য হবেনা।
এই নীতিমালার আওতায় অনুমোদনকৃত লাইসেন্সের মেয়াদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার তারিখ হতে পরবর্তী ১৫ দিন হবে। উক্ত সময়ের পর এইরূপ লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য জারিকৃত নীতিমালার অন্যান্য শর্ত পূরণ হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সাময়িক লাইসেন্সকে সাধারণ লাইসেন্সে রুপান্তর করতে পারবে, লাইসেন্সের মেয়াদ অতিক্রান্ত হলে বা লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও কোন লাইসেন্সধারী উক্ত লাইসেন্সের বিপরীতে কোন আগ্নেয়াস্ত্র নিজ দখলে রাখলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হবে।
রিটেইনার নিয়োগের শর্ত : কেবল প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে রিটেইনার নিয়োগ অনুমোদনযোগ্য হবে, রাজনৈতিক কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে রিটেইনার নিয়োগ করা বা অনুমোদন করা যাবে না, কোন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থী লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্য হলে এবং তিনি আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়ে অসমর্থ হলে বা অনিচ্ছুক হলে বৈধ লাইসেন্সসহ আগ্নেয়াস্ত্র আছে, তা পরিচালনায় সক্ষম এবং কোন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর রিটেইনার হতে ইচ্ছুক এমন কোন ব্যক্তিকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ রিটেইনার নিয়োগ করতে পারবেন। এইরূপ নিয়োগ লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত হতে হবে।
রিটেইনারের যোগ্যতা : বাংলাদেশি নাগরিক ও ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর, অপরাধমুক্ত ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্ত, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (সশস্ত্র বাহিনী বা বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্যগণ অগ্রাধিকার পাবেন), সরকারি হাসপাতাল হতে প্রাপ্ত মেডিকেল ফিটনেস সনদপ্রাপ্ত হতে হবে।
একজন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ একজন রিটেইনার নিয়োগযোগ্য হবে, নির্দিষ্ট মেয়াদের পর রিটেইনারের মেয়াদও শেষ হবে। রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন দাখিল করবেন।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক যাচাই সম্পন্ন করবেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তা যাচাই তিন কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে।
এতে আরো বলা হয়- সব প্রতিবেদন সন্তোষজনক হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অবিলম্বে রিটেইনার লাইসেন্স অনুমোদন প্রদান করবেন। রিটেইনারের অনুকূলে কোন আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ইস্যু করা হবে না, রিটেইনার কেবল আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারী হবেন, অস্ত্রসংক্রান্ত সব দায় লাইসেন্সধারীর ওপর বর্তাবে।
আচরণবিধি : অস্ত্র বহনকালে সর্বদা লাইসেন্স এবং অনুমোদন পত্র সঙ্গে রাখতে হবে, এই অস্ত্র ব্যবহার করে কাউকে ভয়ভীতি প্রদর্শন বা হয়রানি করা যাবে না, নিরাপত্তা ব্যতীত অন্য কোন কাজে বা উদ্দেশ্যে এই লাইসেন্সের আওতাভুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না, এই লাইসেন্স এবং লাইসেন্সভুক্ত অস্ত্র হস্তান্তরযোগ্য হবে না, প্রত্যেক লাইসেন্সধারীর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশ তাৎক্ষণিকভাবে পালন বাধ্যতামূলক হবে।
অপব্যবহার বা নিবাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনে বা সরকারের অন্য কোন বিধি বিধান-নিয়ম লঙ্ঘন করলে লাইসেন্স ও রিটেইনার অনুমোদন কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ/অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ উক্ত লাইসেন্স বা অনুমোদন তাৎক্ষণিক বাতিল করতে পারবে।
নির্বাচনকালীন বিধান : এই নীতিমালা নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আচরণবিধির পরিপূরক হবে এবং কোনক্রমেই উক্ত আচরণবিধি/বিধিসমূহের ব্যত্যয়ে ব্যবহৃত হবে না, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আচরণবিধি লঙ্ঘন স্বতন্ত্র অপরাধ বলে গণ্য হবে। লাইসেন্স বা রিটেইনার নিয়োগ বাতিল/স্থগিতের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আপিল করা যাবে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আজ এসব তথ্য জানানো হয়।