শিরোনাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের এই দিনটিকে ঘিরে পুরো চবি ক্যাম্পাসকে ঢাকা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। শেষ সময়ে এসে ভোটার, প্রার্থী ও প্রশাসন ব্যস্ততম সময় পার করছেন।
সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভবন (সমাজবিজ্ঞান অনুষদ), বিজ্ঞান অনুষদ ভবন এবং শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনসহ (নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ) মোট পাঁচটি ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৪টি কেন্দ্রে হল সংসদ ও ১টি কেন্দ্রে হোস্টেল সংসদ নির্বাচন হবে। প্রতিটি ভবনে ১২টি করে মোট ৬০টি ভোটকক্ষ থাকবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে আলাদা ভোটকেন্দ্র রাখা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পাঁচটি অনুষদের প্রতিটিতে একজন করে মোট পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া কেন্দ্রগুলোর বাইরে আরও চারজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকবে মোবাইল কোর্ট। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, বিজিবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসিসহ প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন মোট ১ হাজার ১২২ জন পুলিশ সদস্য। রিজার্ভ ফোর্স থাকবে ২০০ জন, মহিলা পুলিশ ১৮ জন, রেলওয়ে পুলিশ আনুমানিক ১০০ জন এবং র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্য থাকবেন প্রায় ১০০ জন। পাশাপাশি ডিজিএফআই, এনএসআই, ডিএসবি ও ডিবির শতাধিক সদস্য গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকবে।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। বহিরাগত প্রবেশে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।
কোন পদে কতো প্রার্থী:
চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদে সর্বমোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০৮ জন প্রার্থী। এরমধ্যে চাকসুর ২৬টি পদে লড়ছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে পদে ২২ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ২১ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জন, দপ্তর সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-দপ্তর সম্পাদক পদে ১৪ জন, ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১০ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১১ জন, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ২০ জন, স্বাস্থ্য সম্পাদক পদে ১৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৬ জন, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ৯ জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ২০ জন এবং নির্বাহী সদস্য পদে ৮৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কোন কেন্দ্রে কতো ভোট:
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন। এরমধ্যে প্রকৌশল অনুষদে (আইটি) সোহরাওয়ার্দী হল কেন্দ্রে ভোট দিবেন মোট ৪ হাজার ৩৬ জন শিক্ষার্থী। শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে ভোট দেবেন ৫ হাজার ২৬৩ শিক্ষার্থী, এর মধ্যে শাহজালাল হল কেন্দ্রের ২ হাজার ৬৬৬ জন, এ এফ রহমান হল কেন্দ্রের ১ হাজার ৩০৭ জন এবং আলাওল হল কেন্দ্রের ১ হাজার ২৯০ জন ভোটার রয়েছেন। বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন ৪ হাজার ৫৩৮ শিক্ষার্থী, এর মধ্যে শাহ আমানত হল কেন্দ্রের ২ হাজার ২৪৭ জন, শহীদ আবদুর রব হল কেন্দ্রের ১ হাজার ৭৭৫ জন এবং মাস্টারদা সূর্য সেন হল কেন্দ্রের ৫১৬ জন।
এছাড়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবনে ভোট দেবেন ৬ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে নবাব ফয়জুন্নেছা হল কেন্দ্রের ১ হাজার ১৭৯ জন, শামস্ন্নুাহার হল কেন্দ্রের ২ হাজার ২৯১ জন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল কেন্দ্রের ২ হাজার ৪৮৭ জন এবং অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হল কেন্দ্রের ৬৪৯ জন। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে ভোট দেবেন মোট ৭ হাজার ৭৩ শিক্ষার্থী, যার মধ্যে প্রীতিলতা হল কেন্দ্রের ২ হাজার ৫৫৫ জন, বিজয় ২৪ হল কেন্দ্রের ২ হাজার ৬০৪ জন, শহীদ ফরহাদ হোসেন হল কেন্দ্রের ১ হাজার ৭৬০ জন এবং শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল কেন্দ্রের ১৫৪ জন।
নির্বাচন কমিশন জানায়, ৬০টি কক্ষের প্রতিটিতে গড়ে ৪০০-৫০০ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রতিটি অনুষদ ভবনের ডিনকে রিটার্নিং অফিসার এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে গণনা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে এলইডি স্ক্রিনে লাইভ সম্প্রচার করা হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ক্যাম্পাসে এসে ভোট দিতে পারে তার জন্য শাটলের ২টি ট্রিপ বাড়ানো হয়েছে ও ১৫টি বাস দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ ৩৬ বছরের অচলাবস্থা পেরিয়ে এই নির্বাচনকে ঘিরে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন ভোটের প্রত্যাশা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।