শিরোনাম
ঢাকা, ১১ মে, ২০২৫ (বাসস) : বিনামূল্যে ৯৭ ভাগ নাগরিক প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা চায়। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের অনুরোধে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) একটি জনমত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করার পক্ষে মত দিয়েছেন নাগরিকরা।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন পেশ করেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন কমিশনের সদস্যরা। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন কমিশনের ৩৩২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এই জরিপ তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, খানাভিত্তিক জরিপের প্রশ্নপত্রটি ৪টি সেকশনে বিভক্ত করা হয়। সেগুলো হলো- খানা সদস্যদের তালিকা ও পরিচিতি, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি বিষয়ের অভিজ্ঞতা, জনগণের সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি বিষয়ে মতামত এবং নীতি নির্ধারণ বিষয়ে প্রশ্ন। জনমত জরিপটি পরিচালনার লক্ষ্যে সমগ্র দেশের আটটি বিভাগ (শহর ও পল্লী এলাকা) হতে প্রায় ৩৪৪ টি প্রাথমিক নমুনা এলাকা (শুমারি গণনা এলাকা) নির্বাচন করা হয়। জরিপ পরিচালনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিটি নমুনা এলাকা হতে নমুনায়নের মাধ্যমে ২৪টি সাধারণ খানা নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত প্রতিটি থানা হতে ১৮ বা তদূর্ধ্ব বয়সী একজনের নিকট হতে নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এভাবে দেশব্যাপী প্রায় ৮২৫৬ জন নাগরিকের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ পূর্বক জরিপের উপাত্ত বিশ্লেষণসহ রিপোর্ট প্রণয়নের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে জনশুমারি ও গৃহ গণনা ২০২২ - এর ভিত্তিতে প্রণীত ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিপারপাস স্যাম্পলিং (আই এম পি এস) ব্যবহার করা হয়।
জনমত জরিপ থেকে জানা যায়, দেশের ৯৭ শতাংশ নাগরিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনা মূল্যে দেয়া প্রয়োজন বলে মতামত দিয়েছেন। এছাড়া ঔষধের মূল্য, রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষার মূল্য ও ডাক্তারের পরামর্শ ফী বা অস্ত্রোপচারের ফি নির্দিষ্ট করার পক্ষে মত দিয়েছেন যথাক্রমে ৯৭ শতাংশ, ৯৬ শতাংশ, ৯৬ শতাংশ ও ৯৫ শতাংশ নাগরিক। শহর অঞ্চলের ওয়ার্ডগুলোতে গ্রামীণ ইউনিয়ন পর্যায়ের মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ শতাংশ নাগরিক, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম তথা জনস্বাস্থ্য সেবা পৃথক অবকাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত, এ বিষয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়েছেন ৭২ শতাংশ নাগরিক।
এতে আরো বলা হয়, সহায়ক পদে কর্মরতদের বদলির পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৭৬ শতাংশ নাগরিক, এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া অন্য কারো প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক বিক্রি না করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৮ শতাংশ নাগরিক, স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের বেশির ভাগের দায়িত্ব থাকা উচিত সরকারের- এ বিষয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ শতাংশ নাগরিক। স্বাস্থ্যহানিকর খাদ্য, পানীয় ও ভোগ্যপণ্যের উপর উচ্চহারে কর প্রয়োগ করা উচিত এই বিষয়ে একমত ৭৯ শতাংশ নাগরিক, স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণে আগ্রহী ৭১ শতাংশ নাগরিক, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালিত একই ধরনের সেবাক্রম একীভূত করা উচিত বলে মনে করেন ৬৭ শতাংশ নাগরিক।
সরকার ২০২৪ সালের নভেম্বরে ১২ সদস্যের স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনের প্রধান হিসেবে রয়েছেন ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
কমিশনের সদস্য হিসেবে আরও আছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) জনস্বাস্থ্য ও হেলথ ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক মো. মুহাম্মদ জাকির হোসেন, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার, শিশু নিউরো বিজ্ঞান বিভাগের নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নাইলা জামান খান, সাবেক সচিব এম এম রেজা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক, আইসিডিডিআরবি’র ডা. আজহারুল ইসলাম, স্কয়ার হাসপাতালের স্কয়ার ক্যান্সার সেন্টারের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, গ্রিন লাইফ সেন্টার ফর রিউম্যাটিক কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান পরামর্শক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ আহসানুর রহমান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ওমায়ের আফিফ।