বাসস
  ০৩ জুন ২০২৫, ১৭:৫৭

রাজশাহীতে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় গবাদি পশু পালন ও দুধ উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন

ছবি : বাসস

মো. আয়নাল হক

রাজশাহী, ৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : আধুনিক ব্যবস্থাপনায় গবাদি পশু পালন, মোটাতাজাকরণ, দুধ ও মাংস উৎপাদনে রাজশাহীর একটি খামারের জৈব ও টেকসই পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।

২০২০ সালে পবা উপজেলার মাহিন্দ্র এলাকায় ৩০ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ‘নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্ম’ ওই অঞ্চলে একটি বিশ্বস্ত নামে পরিণত হয়েছে। এটি এখন রাজশাহী জেলার বৃহত্তম ও সবচেয়ে উন্নত খামারগুলো মধ্যে একটি।

প্রাথমিক পর্যায়ে খামারটিতে দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০ লিটার দুধ উৎপাদিত হতো। বর্তমানে দুধ উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ৭০টি ফ্রিজিয়ান গরু থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। এ দুধ প্রক্রিয়াজাত, প্যাকেজজাত করা হয় এবং প্রতি লিটার ৭০ টাকা করে বিক্রি করা হয়।

খামারের প্রাঙ্গণে জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত জন্মানো ঘাস, খড় ও ফর্মুলেটেড ফিড গবাদি পশুদের খাওয়ানো হয়। 
ফ্রিজিয়ানের পাশাপাশি খামারটিতে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, শাহিওয়াল ক্রস, জার্সি, দেশীয় জাতের গবাদি পশু এবং গোয়ালও পালন করা হয়।

উন্নত গবাদি পশুর প্রজননের জন্য কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। দেশবিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বীর্য সংগ্রহ করা হয়। বাছুরগুলোকে তাদের সম্ভাবনা অনুসারে দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য আলাদাভাবে পালন করা হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতোয়ার রহমান বাসস’কে বলেন, গত সপ্তাহে আমি নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্ম পরিদর্শন করেছি। তারা কোনো স্টেরয়েড বা ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে গবাদি পশু মোটাতাজা করছে।

তিনি বলেন, খামারটি রাজশাহীতে সারা বছর ধরে ফ্রেশ মাংস ও প্যাকেজজাত দুধ সরবরাহ করে। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম না হলেও এটি জেলার সবচেয়ে বড় উদ্যোগ।

খামারের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ বলেন, খামারটিতে বর্তমানে প্রায় আটশ’ গবাদি পশু রয়েছে। এখানে এক হাজার গবাদি পশু পালনের সক্ষমতা রয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা চার হাজার গরু রাখার জন্য খামার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছি।

খামারটি নিজস্ব কসাইখানা স্থাপনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি গরু প্রক্রিয়াজাত করে সারা দেশে স্বাস্থ্যকর গরুর মাংস সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।

বর্তমানে তাদের খামারের দুধ ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয় এবং সাত দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। প্রতিদিন দুধ উৎপাদন দুই হাজার লিটারে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চলছে।

গবাদি পশুর জন্য নির্ভরযোগ্য ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহে খামারটি নিকটস্থ একশ বিঘারও বেশি জমিতে জৈব পশুখাদ্য চাষ করছে। শীতকালে খাদ্যের ঘাটতি মোকাবেলায় এটি বছরে প্রায় দুই হাজার টন ঘাস সংরক্ষণ করে।

খামারের উপ-মহাব্যবস্থাপক মাসুমুল হক বলেন, খামারটি মাত্র ২০-৩০টি গবাদি পশু দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে। এর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো- অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম, যা গ্রাহকদের সুবিধাজনকভাবে পশু কিনতে সাহায্য করে।

ঈদুল আযহার আগে খামারটি ১৫০টি গবাদি পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যার ৫০ শতাংশ ইতোমধ্যেই ফেসবুকের মাধ্যমে বুকিং হয়েছে। গত বছর তারা উৎসবের মৌসুমে ২৫০টি গবাদি পশু বিক্রি করেছে। এছাড়া সারা বছর গুরু বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে।

মাসুমুল হক বলেন, আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রাকৃতিক ও নিরাপদ। আমরা গবাদি পশুর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে কখনও স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করি না। বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে আমাদের দুধ ও মাংসজাত পণ্যের সর্বোচ্চ গুণমান নিশ্চিত করা হয়।

খামারটিতে বর্তমানে প্রায় ৯০ জন কর্মী নিযুক্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন ভেটেরিনারি সার্জন এবং একজন পশু চিকিৎসকও রয়েছেন। ‘নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্ম’ বাংলাদেশে টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব গবাদি পশু পালনে একটি মডেল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।