বাসস
  ১৬ মে ২০২৫, ১৫:৫৭

চট্টগ্রামে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৮ লাখ ৬১ হাজার পশু 

ছবি : বাসস

মোহাম্মদ জিগারুল ইসলাম

চট্টগ্রাম, ১৬ মে, ২০২৫ (বাসস): চট্টগ্রামে এবার কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় ৯ লাখ, যা গত বছরের চেয়ে সাড়ে ১০ হাজার বেশি। এর মধ্যে জেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৬১ হাজার পশু। চাহিদার তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার পশুর ঘাটতি রয়েছে। 

প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় চট্টগ্রামে সামান্য পরিমাণ ঘাটতি থাকলেও আশপাশের জেলায় উদ্বৃত্ত কোরবানি যোগ্য পশুর মজুদ আছে। খামারিদের দাবি দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। আমদানি ও চোরাই পথে পশু আনা বন্ধ করতে হবে। এতে খামারিরা টিকে থাকতে পারবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, চট্টগ্রামে ঘাটতি এবারই প্রথম নয়। বলতে গেলে চট্টগ্রাম বিভাগ কখনোই গবাদিপশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। তবে পশুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি হলেও বাজারে এর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ চাহিদা ও লাভের বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে প্রতিবছর প্রচুর পশু চট্টগ্রামের বাজারে আসে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের প্রাথমিক তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানিদাতা বেড়েছেন ৬৭ হাজার ২৯৭ জন। গত বছর চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরে কোরবানি হয়েছে ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু। এবার কোরবানিতে পশুর চাহিদা আছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। এর মধ্যে মজুদ আছে ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। পশুগুলোর মধ্যে গরুর মজুদ আছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। গরুর মধ্যে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৯টি ষাঁড়, ১ লাখ ২১ হাজার ৬৭০টি বলদ, ৪৯ হাজার ১১৪টি গাভী এবং মহিষ ৬৪ হাজার ১৬৩টি, ছাগল ২ লাখ ৫ হাজার ১৭৪টি, ভেড়া ৫৫ হাজার ৬৯৭টি এবং অন্যান্য পশু আছে ৩৫টি। 

জেলায় সবচেয়ে বেশি পশুর চাহিদা আছে সন্দ্বীপ উপজেলায় ৮৫ হাজার ২৫০টি। সবচেয়ে কম ২৯ হাজার ৭৪২টি পশুর চাহিদা রয়েছে বোয়ালখালীতে। অন্যান্য এলাকার মধ্যে সাতকানিয়ায় ৪৫ হাজার ৩৭১টি, চন্দনাইশে ৪৭ হাজার ৪টি, আনোয়ারায় ৬৩ হাজার ৪২৮টি, পটিয়ায় ৭০ হাজার ১৮০টি, কর্ণফুলীতে ৩৩ হাজার ৫৩৩টি, মিরসরাইয়ে ৫৮ হাজার ৭৮০টি, সীতাকুণ্ডে ৫৬ হাজার ৮৫০টি, হাটহাজারীতে ৪৪ হাজার ৮৯০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৫০ হাজারটি, ফটিকছড়িতে ৬৯ হাজার ৪১৯টি, লোহাগাড়ায় ৩৮ হাজার ৫৯টি, রাউজানে ৩৪ হাজার ৩০২টি, বাঁশখালীতে ৫৯ হাজার ৪০৪টি, ডবলমুরিং এলাকায় ৩৭ হাজার ৫০০টি, কোতোয়ালীতে ৩০ হাজার ৬৯৮টি এবং পাঁচলাইশে ৪১ হাজার ৫৫৯টি পশুর চাহিদা রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসেবে চট্টগ্রামে চাহিদার তুলনায় এ বছর ঘাটতি রয়েছে ৩৫ হাজার ৩৮৭ টি পশুর। এবার যা গেল বছরের চেয়ে অন্তত ৪ হাজার বেশি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৭ হাজার ৫০০টি পশুর ঘাটতি রয়েছে নগরীর ডবলমুরিং এলাকায়। আর চাহিদার চেয়ে সবচেয়ে বেশি ৯ হাজার ১১১টি পশু উদ্বৃত্ত আছে জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায়। প্রতিবছর কোরবানির সময় দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ১ লাখেরও বেশি গবাদিপশু আসে চট্টগ্রামের বাজারে। এতে চট্টগ্রাম নগরী এবং ১৫ উপজেলায় পশুর যে ঘাটতি থাকে তা পূরণ হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ , ফরিদপুর, কুমিল্লাসহ আশপাশের ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে পশু। সেসব এলাকা থেকে চট্টগ্রামের হাটে প্রচুর পশু আসে, এবারও আসবে। তাই কোনো সমস্যা হবে না। তবে এবার উৎপাদন ব্যয় একটু বেশি, খাবার, ওষুধসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম বাড়তি। তাই পশুর দাম গেলো বছরের চেয়ে কিছুটা বাড়তে পারে। তবে বাজারের সঙ্গে দরদামের সমন্বয় থাকবে, খুব বেশি বাড়বে না।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪ হাজার ২৫৮ খামার রয়েছে। এর বাইরে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খামার। জেলার মীরসরাই, কর্ণফুলী, পটিয়া, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, আনোয়ারা, রাঙ্গুনিয়া ও বাঁশখালী উপজেলার খামারগুলোতে কোরবানির জন্য বেশি পশু লালনপালন করা হয়ে থাকে।

এদিকে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। পথে-পথে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য বাড়তি খরচের বোঝা না থাকায় বাজারের দামেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। 

সীতাকুণ্ডের নিজ বাড়ির পাশে খামারে গরু লালনপালন করেন হালাল অ্যাগ্রোর মালিক আমিন শরীফ রুবেল। তিনি বলেন, পশু লালন-পালনে এবার খরচ বেশি হয়েছে। বাজারে ভালো দাম না পেলে আমাকে লোকসান গুনতে হবে।

চট্টগ্রাম ডিভিশনাল ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, কোরবানির জন্য এবারও খামারে যথেষ্ট পরিমাণ গরু-মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছে। পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে না। চোরাই পথে দেশে পশু আসাও বন্ধ করতে হবে। এতে খামারিরা লাভবান হবেন।

হোমল্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক মালেক মোহাম্মদ ওমর বলেন, আমার খামার থেকে ১০০টি ষাঁড় বিক্রি করবো। আমার খামার মূলত দুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। লালনপালন করা গরু-বাছুর থেকে ষাঁড়গুলো মোটাতাজা করে প্রতিবছর বিক্রি করি। 

এশিয়ান অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ওয়াসিফ আহমেদ সালমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পশু মোটাতাজা করতে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে। কোরবানির পশুর দাম একটু বাড়তে পারে।