বাসস
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৪
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:০৬

 মেহেরপুরে মেওয়া ফলে  স্বপ্ন বুনছেন বাহাউদ্দীন

মেওয়া চাষ এখন  মোঃ বাহাউদ্দীনের বড় ব্যবসা। ছবি: বাসস

//দিলরুবা খাতুন//

মেহেরপুর, ৯ সেপ্টেম্বর ,২০২৫ (বাসস) জেলার মো: বাহাউদ্দীন (৪৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি নিয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। তারপর বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি। কিন্তু শহরের চাকরি নয়, মাটির টানই টানল বাহাউদ্দীনকে। সব ছেড়ে ফিরে এলেন নিজের গ্রাম গাংনী উপজেলার চেংগাড়ায়। আর শুরু করলেন এমন এক ফলের চাষ, যেটি এখনও উপমহাদেশে ‘অবহেলিত পুষ্টি রত্ন’ হিসেবেই রয়ে গেছে মেওয়া।

আজ তার ছয় বিঘা জমিতে ফলছে এই অম্লø-মধুর ফল। শখের বশে শুরু করলেও, মেওয়া চাষ এখন  তার বড় ব্যবসা। চলতি বছরে তিনি এপর্যন্ত চার লক্ষ টাকার মেওয়া বিক্রি করেছেন। আরও তিন লক্ষ টাকার মেওয়া বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। 

বাহাউদ্দীন জানান, সমস্যা একটাই, সংরক্ষণ এবং পরিবহন। তার কথায়, মেওয়া গাছ থেকে পাড়ার পর দুই দিনের মধ্যেই পেকে যায়। কিন্তু ফল রাখার কোনও হিমঘর বা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে কুরিয়ারে বা ট্রাকে ফল পাঠালে অনেক সময় তা পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যায়। মূলত অনলাইন মাধ্যমেই এখন তাঁর মেওয়া বিক্রি হয়। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরে অনলাইনে অর্ডার আসে প্রচুর। মেওয়া গাছের খুব বেশি যত্ন নেয়া  লাগে না বলে পুরোটাই লাভজনক বলে তিনি জানান।  

বাহাউদ্দীনের বাবা দাউদ হোসেন ছিলেন গাংনী উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান। কিন্তু  বাহাউদ্দীন  নিজে পরিচিত হচ্ছেন এক ‘স্মার্ট চাষি’ হিসেবে, যিনি আম, কাঁঠাল, মাছের খামার ও মেওয়া সব কিছুতেই যুক্ত রয়েছেন। প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে আম, কাঠাল, লেবু, লিচু, কদবেলসহ বিভিন্ন ধরণের ফলের গাছ আাছে। ১৫ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেন। প্রযুক্তি ব্যবহারে তিনি মেওয়ার বাজার দখল করেছেন। “বাহাউদ্দিন এগ্রো ” নামে ফেসবুক, ইউটিউব আর বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে  তার ফলের প্রচার। নতুন প্রজন্মের অনেকেই তার  পথ অনুসরণ করতে শুরু করেছেন। 

গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের তরিকুল ইসলাম জানান, বাহাউদ্দিকে দেখে তিনি দুই বিঘা জমিতে মেওয়া চাষ করবেন বলে জমি প্রস্তুত করেছেন।

বাহাউদ্দীনের সফলতা শুধু  তার ব্যক্তিগত নয়, এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষি উদ্যোগের নতুন দিকচিহ্নও। সরকারের পক্ষ থেকে সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি হলে, মেওয়ার মত উপেক্ষিত ফলও হয়ে উঠতে পারে রপ্তানিযোগ্য পণ্যে।

তিনি বলেন, যদি বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে অনেক চাষি মেওয়ার দিকে আগ্রহী হতেন। এত পুষ্টিকর ফল, অথচ নষ্ট হচ্ছে চোখের সামনে।

মাটি আর বিজ্ঞান একসাথে চললে কী হতে পারে,  তার বাস্তব উদাহরণ বাহাউদ্দীন। রাজশাহীর পরীক্ষাগার ছেড়ে মেহেরপুরের বাগানে এসে তিনি যেন দেখিয়ে দিচ্ছেন, ভবিষ্যতের কৃষি কেমন হওয়া উচিত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের  উপপরিচালক মো. সামছুল আলম জানান, বাহাউদ্দীনের দেখাদেখি অনেকেই মেওয়া চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। মেওয়া চাষ অর্থনৈতিকভাবে একটি লাভজনক পুষ্টিকর ফল। এই ফলটি দেখতে কিছুটা আতা ফলের মত।