বাসস
  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৪৯

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়ালো

চট্টগ্রাম, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ (বাসস) : চট্টগ্রাম জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে।
গত বছর ৩ এপ্রিল নগরীতে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর বিগত ১৭ মাসে করোনার ভাইরাসবাহক লাখ পূর্ণ হয়।
সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে  বিগত ২৪ ঘন্টায় সর্বনি¤œ ১২০ জনের সংক্রমণ সনাক্ত হয়। আক্রান্তের হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজসহ দশটি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১ হাজার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ১২০ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৬২ জন ও দশ উপজেলার ৫৮ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে বাঁশখালীতে সর্বোচ্চ ১৫ জন, মিরসরাইয়ে ১৩ জন, হাটহাজারীতে ১০ জন, চন্দনাইশে ৭ জন, ফটিকছড়িতে ৫ জন, রাউজানে ৩ জন, সীতাকু-ে ২ জন এবং  আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও পটিয়ায় ১ জন করে রয়েছেন। জেলায় করোনাভাইরাসে মোট সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ১ লাখ ৪৫ জন। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৭২ হাজার ৬৫২ জন ও গ্রামের ২৭ হাজার ৩৯৩ জন।
গতকাল করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গ্রামের ৫ জন মারা গেছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ২৪৬ জন হয়েছে। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৬৯৫ জন ও গ্রামের ৫৫১ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন নতুন ৫৯৭ জন। ফলে মোট আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা ৭৪ হাজার ২৩১ জনে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯ হাজার ৯৩৫ জন, ঘরে থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হন ৬৪ হাজার ২৯৬ জন। হোম কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ১৭৪ জন এবং ছাড়পত্র নেন ২৩০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১ হাজার ৫৫৮ জন।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজ বাসস’কে বলেন, ‘সংক্রমণের নি¤œমুখী প্রবণতা আশা জাগছে। আগের দু’দিন হার ১০ এর নিচে থাকলেও গতকাল সামান্য বেড়েছে। তবে সংক্রমণ হারের এ অবস্থাকে আমরা স্বস্তিদায়ক বলতে পারি না। নি¤œমুখী এ প্রবণতাকে ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন বেশি করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। বর্তমানে আমরা লকডাউনের সুফল পাচ্ছি। এখন জীবন-জীবিকার সমন্বয়ের লক্ষ্যে সবকিছুই খুলে দেয়া হচ্ছে, ফলে আমাদেরকে অধিক সচেতন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ হার ৫ এর নিচে এলে স্বস্তিদায়ক বলা যায়। করোনা ভাইরাসেকে প্রতিরোধ বা নির্মূলের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা হলো বিধি-নিষেধসমূহ কঠোরভাবে মেনে চলা। অন্যথায় আমাদেরকে আবারো নাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।’   
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের করোনার প্রকোপ শুরুর পর গড়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার ৮৮৫ জন সংক্রমিত হন। এর মধ্যে ভয়ংকর আগ্রাসন ছিল গত জুলাই মাসে। একদিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৬৬ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২৯ জুলাই। এদিন ৯ জনের মৃত্যু হয়। বেসরকারি হাসপাতাল মনিটরিং  কমিটির তথ্য অনুযায়ী, নগরীর হাসপাতালে একদিনে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি ছিলেন গত ৬ আগস্ট, ২১ শ’র বেশি। করোনাকালের সর্বোচ্চ মৃত্যুও জুলাই মাসের ২৬ তারিখে। এদিন শহরের ৭ জন ও গ্রামের ১১ জন মিলে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। সংক্রমণ ঘটে ১ হাজার ৩১০ জনের শরীরে। চব্বিশ ঘণ্টায় সংখ্যা ও হারে চট্টগ্রামে করোনার সর্বনি¤œ সংক্রমণ শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি। এদিন ১ হাজার ২২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ২১ জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি মেলে। সংক্রমণ হার ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। করোনায় কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, গতকাল সবচেয়ে বেশি ৩৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে। এখানে ৩৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় শহরের ১৮ ও গ্রামের ২৬ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১৭৮ টি নমুনায় শহরের ২১ ও গ্রামের ১২ টিতে ভাইরাস পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৮৬ জনের নমুনার মধ্যে শহরের ৬ জন করোনায় আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হন। ৩৭ জনের এন্টিজেন টেস্টে গ্রামের একজন সংক্রমিত বলে জানানো হয়। নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল-এ পরীক্ষিত ১৫ টি নমুনায় শহরের ৩ টি ও গ্রামের ২ টির পজিটিভ রেজাল্ট আসে।
বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাবগুলোর মধ্যে শেভরনে ১৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় সবগুলোরই নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়। মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৪ টি নমুনায় গ্রামের ২ টি, মেডিকেল সেন্টারে ৯ টি নমুনার মধ্যে শহরের ২ টি এবং এপিক হেলথ কেয়ারে ৫০ টি নমুনা পরীক্ষায় শহরের ১২ ও গ্রামের ২ টিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের ৯৭ জনের নমুনা কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় ১৩ টির রিপোর্ট পজিটিভ হয়।
এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল এবং নতুন যুক্ত ল্যাব এইডে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট পর্যবেক্ষণে সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়, বিআইটিআইডি’তে ১১ দশমিক ৮২, সিভাসু’তে ১৮ দশমিক ৫৪, চমেকে ৬ দশমিক ৯৭, এন্টিজেন টেস্টে ২ দশমিক ৭০, আরটিআরএলে ৩৩ দশমিক ৩৩, শেভরনে ০ শতাংশ, মা ও শিশু হাসপাতালে ৫ দশমিক ৮৮, মেডিকেল সেন্টারে ২২ দশকি ২২, এপিক হেলথ কেয়ারে ২৮ এবং কক্সবাজার মেডিকেলে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।