সিলেট, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ (বাসস) : সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক অ্যাডভোকেট মো, লুৎফুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ শুক্রবার বেলা ২.৩০টায় সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এডভোকেট লুৎফুর রহমানের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে মরহুমের কফিনে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্হানীয় নেতৃবৃন্দ।
পরে পুলিশের একটি দল গার্ড অব অনারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। পরে তাকে সিলেট নগরীর মানিক পীর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
জানাযায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কেন্দীয় সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, সাইফুজ্জামান শেখর এমপি সহ সিলেটের বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তাগনসহ সর্বস্তরের হাজার মানুষ অংশ নেন। এসময় পুরো মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
জানাযার নামাজে ইমামতি করেন সিলেটের বিশিষ্ট আলেম হযরত মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি। এর আগে সকালে শেষ বারের মতো তাঁর কর্মস্থল সিলেট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিয়ে আসা হয়। সেখানে শেষবারের মতো সিলেটবাসীর প্রিয় এ নেতাকে তাঁর সহকর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন সহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের বিপুল সংখক মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানান।
গত বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে তিনি সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্হায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর।
তাঁর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সহ আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শোক জানিয়েছেন।
এডভোকেট মো, লুৎফুর রহমান ১৯৬২ সালে প্রথমে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। তখন তিনিসহ আরও কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ পুনঃগঠন করেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগ তাঁর নেতৃত্বে সিলেট অঞ্চলে আইয়ূব খান বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। একই বছর হামিদুর রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন লুৎফুর রহমান। ১৯৬৬ সালেবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। তখনকার সামরিক সরকারের শাস্তির ঝুকি মাথা নিয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেই থেমে থাকেননি জীবনের ঝুকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ।১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানকে প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে তিনি সিলেটের বালাগঞ্জ থানা এবং ফেঞ্চুগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকা থেকে বিপুল ভোটে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
পরবর্তী সময়ে সকল আন্দোলনে যোগদানসহ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের আরও কয়েকজন এমপিএ আসামের করিমগঞ্জ শহরে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন তিনি। করিমগঞ্জে টাউন হলে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী যুবকরা জমায়েত হয়ে তিনিসহ আব্দুল লাতিফ এম.পি.এ টাউন হলের দায়িত্বে ছিলেন এবং যুবকদের খাওয়া দাওয়া এবং কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিতেন।এতে করিমগঞ্জের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাঁদের অনেক সাহায্য করেন। এই ক্যাম্প থেকে প্রতি সপ্তাহে গেরিলা ট্রেনিং নেওয়ার জন্য যুবকদের ট্রেনিং কেন্দ্রে পাঠাতেন তাঁরা। দেওয়ান ফরিদ গাজী এম.এন.এর সাথে অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ৩ নং এবং ৪ নং সেক্টরে সিভিল এফ্যায়ার্স সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পুনর্বাসন কাজে অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান দিন রাত পরিশ্রম করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গণপরিষদের সদস্য হন এবং হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধানে একজন স্বাক্ষরকারী হিসেবে সংবিধান পাশ করায় অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ এর পনেরো আগষ্ট ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পরে অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানকে আটক করে অনেক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন সিলেট জজ আদালতে আইন পেশার পাশাপাশি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ এডভোকেট লুৎফুর রহমান সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মনোনীত ও সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট জেলা ইউনিটের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।