কুুমিল্লা (দক্ষিণ), ১ সেন্টম্বর, ২০২১ (বাসস) : কুমিল্লা মহানগরীতে ছাদবাগানে আগ্রহ বাড়ছে তরুণ তরুণীসহ সববয়সী মানুষের। এ নগরীতে বেশির ভাগ মানুষ শখের বসত এ ছাদবাগানগুলো করছেন। এতে করে একদিকে যেমনিভাবে বিষমুক্ত ফল-ফসলাদি ও শাক সবজির চাহিদা মিটছে, তেমনিভাবে একজন উদ্যোক্তার সৃজনশীলতারও বিকাশ ঘটছে। এমনি একজন ছাদবাগান প্রেমী ব্যবসায়ী আব্দুর রব। নগরীর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় আব্দুর রবের ছাদবাগানটি যেন এক টুকরো সবুজ উদ্যান।
জানা যায়, ইট কাঠের নাগরিক সভ্যতার শহরগুলো থেকে দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। কিন্তু মানুষ তার শিকড়কে সহজে ভুলতে পারে না। সবুজে ভরা গ্রাম বাংলায় বেড়ে উঠা নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চায় আবাসস্থলে। শৌখিন মানুষরা তাদের ঘরবাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় আপন আপন বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছাদ বাগান। নিজের বাড়ির উঠোন কিংবা ছাদে ফল-ফলাদি উৎপন্ন করার ব্যাপারে অনেকেই এখন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কেননা পরিকল্পিত এবং শখের বসে ছাদকৃষি আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুধু ফল-ফসলাদিরই চাহিদা মিটছে না একজন উদ্যোক্তার সৃজনশীলতারও বিকাশ ঘটছে। বিনিয়োগের কথা যেমন ভাবা হয় না, ঠিক তেমনিভাবে প্রাপ্তি হিসেবেও রাখা হয় না শখের এ ছাদবাগানে।
এমন তাগিদ থেকেই কুমিল্লা মহানগরীর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড চৌরাস্তা সংলগ্ন শ্রীমন্তপুর নোয়াবাড়িতে ব্যবসায়ী আব্দুর রব তার পাঁচ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর ছাদে শুরু করেছিলেন ফুল, ফল ও সবজি চাষের মধ্য দিয়ে ছাদবাগান। ছাদে এসে বাগানটি দেখে যে কারোর’ই মনে হবে এ যেন ছাদ নয়, যেন এক টুকরো নির্মল উদ্যান। কুমিল্লা নগরে বাস করেও গ্রামীণ ঐতিহ্য কৃষির ভালোবাসা এবং সবুজের ছোঁয়ায় জীবনের প্রশান্তি খুঁজতেই দেড় বছর আগে ছাদবাগান গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন আব্দুর রব। ২৬’শ বর্গফুটের পাঁচতলার ছাদে সৃষ্টি করেছেন ফুল, ফলমূল, শাকসবজির অনন্য এক ক্ষেত্র। শাক সবজি, ফল-ফুল ও ওষুধি গাছের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে আব্দুর রব এর ছাদকৃষির এ আয়োজন। ইট পাথরের এ ছোট্ট শহরে সবুজ গাছের ছোঁয়ার অভাব খুব অনুভব করছিলেন তিনি। পেশাগত কাজের পাশাপাশি প্রকৃতি ও গাছের প্রতি অন্যরকম এক ভালোলাগা ও ভালোবাসা থেকে নিজ বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদবাগান। ২০২০ সালের শুরুর দিকে পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় তিনি বাজার থেকে কিছু গাছের চারা কিনে বাসার ছাদে লাগান। এরপর বিভিন্ন সময় সবজি, ফল, ফুল ও ওষুধি গাছের চারা কিনে ছাদে ছোট আকারে দেয়াল করে মাটি ভরাট করে এবং টবে ও ড্রামে গাছগুলো লাগিয়েছেন। বর্তমানে তার ছাদে প্রায় ১’শ ৩০ প্রজাতির নানা জাতের গাছ শোভা পাচ্ছে। ছাদ বাগানে ৩০/৪০ জাতের ফল ৪০/৫০ জাতের ফুল ও ২০/৩০ জাতের সবজির গাছ রয়েছে। যেখানে আম, কলা, মাল্টা, কমলা, আঙ্গুর, কামরাঙ্গা, বিলম্ব, আমড়া, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, মরিচ, লাউ, গোলাপ ফুল, গাঁধাফুল, জবা ফুলসহ নানা জাতের গাছ। এছাড়া শীতের মৌসুমে শিম, কপি ও বাঁধাকপিসহ নানান সবজিও চাষ করে থাকেন। পরিবারের সদস্যরা পরিচর্চার পাশপাশি তিনি নিজেও পরিচর্চা করেন।
এ বিষয়ে আব্দুর রব বাসসকে বলেন, গত দেড় বছর বাসার ছাদে টবে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পরিচর্চা করছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দিয়ে থাকেন। আমাদের অনেকেই এখন ছাদ বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যেখানে নিজের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। এটি মন ভালো রাখার মতো একটি একটিভিটিজ।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বাসসকে বলেন, আব্দুর রব আমাদের কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগীতা নিয়েছেন। আমাদের ব্লক সুপার ভাইজাররাও আব্দুর রব এর বাসায় গিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন বলে জানান।