বাসস
  ০৬ জুন ২০২৩, ১৯:০৬

ঐতিহাসিক ৬দফা আন্দোলনে ফেনী ছিল উত্তাল

॥ আরিফ রিজভী ॥
ফেনী, ৬ জুন, ২০২৩ (বাসস) : ঐতিহাসিক ৬দফা আন্দোলনে তখন ফেনী ছিল উত্তাল। এ আন্দোলন পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি হলেও সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ৬ দফার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল। ফেনীও এর ব্যতিক্রম ছিল না।
ফেনীতে ৬ দফা আন্দোলন প্রসঙ্গে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। যতটুকু পাওয়া যায়, তাতে আহুত আন্দোলনের দু’টো দিক লক্ষ্যণীয়।
১৯৬৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীতে ‘আমাদের বাঁচার দাবি’ নিয়ে জনসভা করেন পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান। এ সভায় ফেনী হতে তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগ নেতারা যোগদান করেছিলেন (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬)।
চট্টগ্রামে ৬ দফার পক্ষে প্রথম জনসমাবেশ করে নোয়াখালী যাবার পথে ফেনী সীমানায় আঞ্চলিক সড়কে সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানিয়েছিল বলে জীবদ্দশায় জানিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সদ্য প্রয়াত আবদুর রহমান বি.কম। নোয়াখালীর সভাতে তিনি নিজেও যোগ দিয়েছিলেন।
৬ দফা দাবি নিয়ে নোয়াখালীতে জনসভার পর এই আন্দোলন জেলার সর্বত্র ছড়াতে থাকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা হোসেন জানান, ফেনী মহকুমার প্রতিটি জনপদে ৬ দফার পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ফেনীতে এ আন্দোলনকে বেগবান করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। ৬ দফার পক্ষে গান তৈরি করে শহর-গ্রামে গেয়ে বেড়িয়েছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এর পরিকল্পনায় ছিলেন মহকুমা আওয়ামী লীগ সভাপতি খাজা আহমদ।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল বারিক ও আখতারুজ্জামান ছিলেন চারণকবি। সেসময় এ দু’জন মানুষ গান বাঁধতেন এবং তা চোঙ্গে মুখ লাগিয়ে রাস্তায় রাস্তায় গানগুলো গাইতেন। তাঁদের বাড়ি ছিল যথাক্রমে শহরতলীর লালপোল ও রতনপুরে।
সেসময়ের একটি গানের কয়েকটি কলি ছিল নিম্নরূপ-

‘আয় রে আয়
বঙ্গবন্ধুর ছায়াতলে
তোরা চলে আয়
৬ দফার ডাক এসেছে
রাস্তায় নেমে আয়।’

আরও একটি গান তখন মানুষের পছন্দের তালিকায় ছিল-
‘তোমার ডাকে যদি
কেউ সাড়া না দেয়
তবে একলা চল একলা চল।’

কবি আবদুল বারিকের আরও একটি গান ছিল নিম্নরূপ-
‘বাঙলার সম্পদ খাইলো শকুনে
বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছে
সাথে চলো রে।’

প্রবীণদের তথ্যমতে, ৬ দফার দাবি আন্দোলনের কারণে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে- ফেনীতেও আন্দোলন হয়েছে। রাস্তায় মিছিল-মিটিং করে প্রতিবাদ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
১৯৬৬ সালের এপ্রিলে বঙ্গবন্ধুকে কয়েকদফা গ্রেফতারের প্রতিবাদে ফেনীতে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। 
২৫ এপ্রিল ফেনীতে প্রতিবাদ সমাবেশের খবর দৈনিক ইত্তেফাকে পরিবেশিত হয়। এতে বলা হয়, 'শেখ মুজিবুর রহমানের হয়রানীর প্রতিবাদে আজ সমস্ত ফেনী শহর প্রতিবাদমুখর হইয়া উঠে। বিভিন্ন দেওয়াল পত্রিকা ও পথসভার মাধ্যমে ছয়-দফার প্রণেতা শেখ মুজিবের অহেতুক হয়রানির নিন্দা করা হয়। আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত পথসভায় বক্তৃতা করেন- ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শামসুল হুদা, প্রাক্তন এমপিএ, জনাব গাজী আহমদ প্রমুখ' (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ এপ্রিল ১৯৬৬)।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম মাওলানা আজিজুল ইসলামের ছেলে আনিসুর রহমান বলেন, বাবা বেঁচে থাকাকালে বলতেন- ৬ দফা আন্দোলন ফেনীর প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন থানায় এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। আন্দোলনকে গণমুখী করতে সকল স্থানেই নিজেদের মতো করে ৬ দফা নিয়ে গান, ছড়া তৈরি হয়েছিল। এসব গান, ছড়া রাজপথে গেয়ে মানুষকে আন্দোলনের কথা জানিয়ে দেয়া হত। পশ্চিম পাকিস্তান কিভাবে আমাদের শোষণ করছিল, তা গানের সুরে-সুরে তুলে ধরা হত।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়