বাসস
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:২৮

এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প নেই

ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই।
আজ সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা একথা বলেন।
সংসদ সদস্যরা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একটি উদীয়মান বাঘে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। 
গত ৫ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ি বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে রাষ্ট্রপতি এ ভাষণ দেন। রীতি অনুযায়ি এ ভাষণ সম্পর্কে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার।
ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার ১৭তম দিনে আজ অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, বেগম মেহের আফরোজ, মুহিবুর রহমান মানিক, মো. শিবলী সাদিক, মনোরঞ্জনশীল গোপাল, আবুল হাসেম খান, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বাসন্তি চাকমা, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান।  
তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, যোগাযোগ, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরেন। 
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য, জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে সারাদেশ ঘুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করেন এবং দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর তিনি মাত্র সাড়ে ৩ বছরে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষার উন্নতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর দেশী বিদেশী চক্রান্তে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতার বাইরে ছিল আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকার উন্নত বাংলাদেশ গড়তে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। 
তিনি বলেন, দেশের সকল মানুষকে উন্নয়নের ¯্রােতধারায় সম্পৃক্ত করতে, গ্রামের মানুষের জন্য শহরের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন-আমার গ্রাম, আমার শহর’। এই দর্শনকে সামনে নিয়ে আমরা কাজ করছি। সকলের জন্য স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করা শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছি। ৯০ শতাংশ পানি সরবরাহের আওতায় এসেছে। ৭০ শতাংশ সারফেস ওয়াটারের উপর নির্ভরশীলতা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে ঢাকা শহরে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ পানি পেতো না, মহিলারা কলসি মিছিল করেছে পানির জন্য। আমরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে শতভাগ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, সারা বিশে^র কাছে বাংলাদেশ এখন একটি বিস্ময়। 
তাজুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তান আমলে মাথাপিছু আয় ছিল ১৪০ মার্কিন ডলার, পাকিস্তান ২৩ বছরে মাথাপিছু আয় ১৪০ ডলারের উপরে উঠাতে পারেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটিকে মাত্র সাড়ে ৩ বছরে ২৭৭ ডলারে উন্নীত করেছেন। এরপর ২১ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের প্রয়াসে ১৯৯৫ সালে মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ৩২৯ ডলার, অর্থাৎ ২১ বছরে তাদের অর্জন ছিল ৫২ মার্কিন ডলার। আর ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  ক্ষমতায় আসার পর মাথাপিছু আয় ৭০০ মার্কিন ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ১৪ বছরে অর্জন ২ হাজার ১২৪ মার্কিন ডলার। আর তারা ২১ বছরে অর্জন করেছে ৫২ মার্কিন ডলার। এটাই হলো আওয়ামী লীগ আর অন্যদের মধ্যে প্রার্থক্য। 
তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে আসুক আর না আসুক, সংবিধান অনুযায়ী দেশে নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল সরকার গঠন করবে এবং শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের উন্নয়নের হাল ধরবেন। 
তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত কেবল সরকার বিরোধী নয়, এরা দেশ বিরোধী। তাই তারা মানবাধিকারের কথা বলে জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছে। এসব স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র নির্মূলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।  
সরকারি দলের সংসদ সদস্য বেগম মেহের আফরোজ বিএনপি-জামাতসহ যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা নারীদের ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখে তাদের প্রত্যাখ্যান করতে দেশের নারী সমাজের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, করোনা মহামারীর সময় বিএনপি-জামায়াত কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেনি। তিনি দেশের আরও উন্নয়নের জন্য শাসনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সরকারি দলের সদস্য আবুল হাসেম খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে বাংলার মানুষকে কথা দিয়েছিলেন বাংলার মানুষের জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করবেন, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি তার কথা রেখেছেন। শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, এরপরও তিনি বাঙালি জাতিকে ফেলে পালিয়ে যাননি। তিনি আমাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনপ্রতিষ্ঠা করেছেন। রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন। একটা জাতির উন্নয়নের জন্য যা যা করণীয় তার সবকিছুই তিনি করেছেন। বাংলাদেশকে ইতোমধ্যেই তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন।
মহিবুর রহমান মানিক বলেন, বাংলাদেশ একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি ছিল এবং দেশে দারিদ্র্য ছিল, কিন্তু শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে দেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি এখন রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা বিদেশে দেশের সুনাম ক্ষুণœ করছে।
সরকারি দলের সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপাল আলোচনায় অংশ নিয়ে অবিলম্বে রাজাকারের তালিকা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে বলেন, তালিকা হলে রাজাকারের পরবর্তী প্রজন্ম, তাদের সন্তানরা তাদের পূর্বপুরুষের কুকর্মের কথা জানতে পারবে। তিনি দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়নেরও দাবি জানান। 
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, চলমান উন্নয়নকে অর্থবহ করতে এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে বাস্তবায়িত করতে সরকারকে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে।
সংসদ সদস্যরা বলেন, এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখতে চায়। কারণ তিনি দেশের মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দেন তা তিনি রক্ষা করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। 
সরকারের সাফল্যের বিস্তারিত তুলে ধরে দেশকে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করার জন্য সময়োপযোগী ভাষণ দেয়ার জন্য সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে তারা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের জন্য গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়