বাসস
  ২৫ নভেম্বর ২০২২, ১০:৫৯

টুঙ্গিপাড়ার ৩৩ বিদ্যালয়ের ৯ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য উপযোগি এখন নতুন খেলার মাঠ

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৫ নভেম্বর, ২০২২ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বরাদ্দের ৩ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকায় জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ৩৩ টি বিদ্যালয়ে ৯ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নতুন খেলার মাঠ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। 
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার ২০টি প্রাথমিক ও ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ তৈরি ও সম্প্রসারণ করা হয়। 
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের ৩ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে এসব মাঠ বালু দিয়ে ভরাট ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বালু ভরাটের পর ওপরে মাটি দিয়ে মাঠগুলো খেলাধূলার উপযোগি করে তোলা হয়েছে। পরে  বিদ্যালয়ে মাঠগুলো সংস্কারের মাধ্যমে খেলাধূলার উপযোগি করে গড়ে তোলা হয়েছে। এতে দৈনন্দিন পাঠক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলার মাঠ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নবুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হৃদয় মন্ডল বলে, আগে বিদ্যালয়ে আসতাম আর ক্লাস করে বাড়ি চলে যেতাম। মাঠ না থাকায় বন্ধুদের গিয়ে খেলতেও পারতাম না। এখন আমাদের খেলার মাঠ হয়েছে। তাই বন্ধুদের সঙ্গে মোড়গ লড়াই, ফুটবল, গোল্লাছুট, কানামাছি খেলতে পারি। স্কুলে এসে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। শুধু হৃদয়ই নয় পড়াশোনার পাশাপাশি খেলার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় আনন্দিত টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৩৩টি বিদ্যালয়ের প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী।
গোপালপুর ইউনিয়নের রাখিলাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র আকাশ মন্ডল বলে, আগে আমাদের বিদ্যালয়ে কোন মাঠই ছিল না। এর ফলে আমরা খেলাধুলা করতে পারতাম না। এখন মাঠ তৈরি হওয়ায় আমরা বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করতে পারছি। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।
গোপালপুর রাখিলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিদাস বিশ্বাস বলেন, বিদ্যালয়টির অবস্থান নিচু এলাকায়। সামান্য বৃষ্টিতেই বিদ্যালয়ে পানি উঠে যেতো। এছাড়া মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারতো না। এ অবস্থায় পাঠদান করা হত। কিন্তু  শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশ ঘটতো না। মাঠ তৈরির পর এখন শিক্ষার্থীরা খেলাধূলাও করতে পারছে। এখন আর বিদ্যালয়ে পানি উঠে পাঠদান  ব্যাহত হবে না।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ ছিলো না। আর যেসব বিদ্যালয়ে মাঠ ছিলো সেগুলোও ছিল খেলার অনুপযোগী। খেলাধূলার মাঠ ও পরিবেশ না থাকায় শারীরিক ও মানসিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো উপজেলার অন্তত ৯ হাজার শিক্ষার্থী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে টুঙ্গিপাড়া এসে বিষয়টি জানতে পারেন। তখন তিনি দ্রুত মাঠ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের খেলাধূলার উপযোগি করে তুলতে নির্দেশ দেন। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম আন্তরিকতার সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের টাকায় ৩৩ টি বিদ্যালয়ের মাঠ তৈরি ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেন। তিনি বর্তমানে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন এই কাজ সমাপ্ত করেছেন। খেলাধুলার মাঠ পেয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ তৈরি ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এতে দৈনন্দিন পাঠক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলার মাঠ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসটি একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে চান। সেই লক্ষ্যই আমরা কাজ করছি। বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারলে শিক্ষার গুনগতমান বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে। এতে তরুণ প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়