বাসস
  ০২ অক্টোবর ২০২২, ১০:৩৪

গোপালগঞ্জে ফল বাগানে মিলছে অর্থ ও পুষ্টি

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২ অক্টোবর, ২০২২ (বাসস) : গোপালগঞ্জে পতিত জমিতে একের পর এক  ফল বাগান করে দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। মিলছে পুষ্টি ও অর্থ। গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ফলের চারা, সার, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এসব ফলের বাগান স্থাপন করে দিচ্ছে। পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ শেষে বাড়তি ফল বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন উদ্যোক্তা।  এ কারণে প্রতিবছরই গোপালগঞ্জে লাভ জনক মিশ্র ও একক ফলের বাগান সম্প্রসারিত হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সেকেন্দার শেখ বলেন, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আমরা এ অর্থ  বছরে ৫টি ফলের বাগান করে দিয়েছে। এ পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় আমরা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় পতিত জমিতে ৩০ টি ফলের বাগান স্থাপন করেছি। এর মধ্যে ৫টি মিশ্র ও ২৫ টি একক ফল বাগান রয়েছে। মিশ্র ফল বাগানে আমরা সিডলেস লেবু, হাড়িভাঙ্গা, হিমসাগর, কিউজাই আম, বারমাসী থাই পেয়ারা, চায়না-৩ লিচু, বরই, সবেদা গাছের চারা দিয়েছি। একক বাগানে আ¤্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া আমের চারা দেওয়া হয়েছে। এসব ফল বাগানে আমরা উচ্চ ফলনশীল জাতের ফলের চারা দিয়েছে। মিশ্র ফল বাগানে উদ্যোক্তা প্রথম বছর থেকে ফলের উৎপাদন পাচ্ছেন। একক বাগানে ২ বছরের মাথায় উদ্যোক্তারা আমের ফলন পেয়েছেন। ফল বাগান সৃজনে আমরা উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, ফলের চারা ও প্রকল্প থেকে বরাদ্দকৃত সার বিনা মূল্যে প্রদান করছি। ফল বাগান করে অনেকেই পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে বাড়তি ফল বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন। তাদের দেখা দেখি অনেকেই লাভজনক ফল চাষে ঝুঁঁকেছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ঘোনাপাড়া গ্রামের মিশ্র ফল চাষি মতিন মোল্লা (৩৫) বলেন, আমরা তিনবন্ধু মিলে একটি মিশ্র ফল বাগান করার উদ্যোগ নেই। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ৪৪ টি বিভিন্ন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ফলের চারা, জৈব সার ৮ বস্তা, ডিএপি সার ১ বস্তা, ইউরিয়া ১৫ কেজি, এমওপি ১২ কেজি, ডিএপি সার ১৫ কেজি, জীপসাম ১ কেজি, জিংক সার ১ কেজি বিনামূল্যে দিয়েছে।  আমাদের পতিত ২০ শতাংশ জমিতে এ বাগান আমি চলতি বছরের সৃজন করি। আমার বাগানের বয়স ৬ মাস। এর মধ্যে আমার মিশ্র ফল বাগানে পেয়ারা ধরেছে। বরই গাছে ফুল এসছে। আমরা এখান থেকে পেয়ারা খাচ্ছি। আশা করছি ১৫ দিনের মধ্যে আমি পেয়ারা বিক্রি করতে পারব। এ বাগানের সাথে আরো ৩২ শতাংশ পতিত জমিতে আমি বারমাসী পেয়ারার আবাদ করেছি। গাছে পেয়ারার ফলন দেখে অনেকেই ফলের বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ বাগানের মধ্যে ডাটা ও পুঁই শাকের আবাদ করে ছিলাম। এ বছর এখান থেকে ১৫ হাজার টাকার শাক বিক্রি করেছি।
ওই উদ্যোক্তা আরো বলেন, আগে আমাদের এ জমি পতিত পড়ে ছিল। এখানে কাশ বন ও ছোন জন্মাত। এতে আমাদের ঘরে কোন অর্থ আসত না। এখন ফল বাগান করেছি। এখান থেকে উপার্জন হচ্ছে।
মতিন মোল্লা আরো বলেন, ফল বাগান কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। আত্মপ্রত্যয়ীরা কৃষি বিভাগের সহায়তা নিয়ে ফল বাগান স্থাপন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এতে অর্থ ও পুষ্টি দুই মেলে।
গোবরা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্বতী বৈরাগী বলেন, আমর ইউনিয়নে ৫টি ফলের বাগান রয়েছে। আমি নিয়মিত এসব বাগান পরিদর্শণ করে উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। ফল বাগান করে তারা লাভবান হয়েছেন। তারা ফলের বাগান সম্প্রসারণ করছেন। এখন তাদের দেখাদেখি অনেকেই পতিত জমিতে ফল বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
গেবারা গ্রামের কৃষক মারুফ আলী চৌধূরী বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ প্রশিক্ষণ ও শুধু বিনামূল্যে ফলের চারা, সার দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেনি। তারা বাগান সৃজনে তদারকি করেছেন। নিয়মিত ফল বাগান পরিদর্শন করে কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছে। এ কারণে ফলবাগান গুলো দাঁড়িয়ে গেছে। আমি নিয়মিত মতিনের ফল বাগান পরিচর্যা করি। এ বাগানে ফলের যে অবস্থা তাতে আগামী ১৫ দিন পর থেকই ফল বিক্রি শুরু হবে। এ বাগানটি লাভ জনক বাগান হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়