বাসস
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৭

ঠাকুরগাঁওয়ে মিন্টুর ঘরের ছাদের ২০০ টবে ৭০ প্রজাতির গাছ

॥ মো. আসাদুজ্জামান আসাদ ॥
ঠাকুরগাঁও, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ (বাসস) : জেলা শহরের ঘোষপাড়ার মিন্টু আহমেদ। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। শহরে ২ হাজার ১০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের ৫ তলা ছাদে ২০০টি টবে দেশি-বিদেশি হরেক রকমের ফুল, ফল ও সবজির গাছ লাগিয়ে ছাদ কৃষি গড়ে তুলেছেন তিনি। তার রয়েছে ৭০ প্রজাতির ফলের গাছ।
মিন্টুর মতো ঠাকুরগাঁও শহরে অনেকেই ছাদ কৃষিতে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। প্রায় সারা বছরই ছাদ কৃষিতে ফুল-ফল, শাক-সবজি চাষ করছেন তারা। শহরে শতাধিক ভবনের ছাদে ছাদ কৃষি করার কথা জানা গেছে। মিন্টুর মতো অনেকে ছাদ বাগান গড়ে তুলছেন। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে ঠাকুরগাঁও শতাধিক ভবনের ছাদে ছাদ কৃষি আছে। প্রতিটি ছাদে ৬০ থেকে শুরু করে তিন শতাধিক ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে। তবে শহরের ঘোষপাড়া, হাজীপাড়া, শাহাপাড়া, সরকারপাড়া, ইসলামনগর এলাকায় ছাদ কৃষিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেশি।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁও শহরের ঘোষপাড়ার মিন্টু আহমেদ। গাছের প্রতি তার ভালোবাসা ছোট থেকেই। প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল বাগান করার। শহরে বাগান করার মতো ভালো কোনো পরিবেশ নেই, তাই বাসার  ঘরে ছাদেই গড়ে তুলেছেন বাগান। যেখানে রয়েছে ৭০ প্রজাতির ফলের গাছ। ফল ও সবজির বাগান করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণের সঙ্গে ঘরের ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন তিনি। 
ছাদ বাগানকারী মিন্টু আহমেদ বলেন, ইউটিউবে প্রথম ছাদে বাগান দেখেন তিনি। এরপর থেকে আগ্রহ জাগে, কীভাবে নিজের বাসার ঘরের ছাদে করা যায় একটি বাগান। যা একই সঙ্গে পুষ্টির অভাব দূর করবে, পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাও করবে। তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যেতাম, সেখানেও এই বিষয়টি নজরে পড়ে এই থেকেই ধীরে-ধীরে বাগান করা শুরু। ‘আমি প্রথমে তিনটি গাছ নিয়ে এই বাগান শুরু করি। একটি লেবু গাছ, একটি আম গাছ ও একটি মাল্টা গাছ। এরপর যখন দেখি ফলন অনেক ভালো হচ্ছে, তখন আমি আরও ফলের চারা নিয়ে আসা শুরু করি। ’ধীরে-ধীরে বাড়তে থাকে মিন্টুর বাগানে গাছের সংখ্যা। তার ঘরের ছাদবাগানে রয়েছে- আম (১৪ জাতের), লিচু, কাঁঠাল, কমলা (৪ জাতের), মাল্টা (৩ জাতের), পেয়ারা (২ জাতের), কামরাঙা, আমড়া, জলপাই, সফেদা, শরিফা, আমলকী, বেদেনা, জাম্বুরা, জামরুল (২ জাতের), বেল, আতা, করম-চা, আপেল, নাশপাতি, ড্রাগন, আঙ্গুর (৩ জাতের), বরই (২ জাতের), লেবু (২ জাতের), ডালিমসহ দেশি-বিদেশি ৭০ প্রজাতির ফলের গাছ। ছাদের এই বাগানের উৎপাদিত ফল যেমন নিজেদের চাহিদা মেটায়, অন্যদিকে প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও বিতরণ করেন। বাগান দেখতে অনেকেই আসছে তার বাড়িতে। 
ফেসবুকে মিন্টুর বাগানের কথা জেনে দেখতে এসেছেন প্রকৃতিপ্রেমী রাকিব আল রিয়াদ। তিনি বলেন, এই বাগানের কথা বেশ কিছুদিন ধরেই শুনছি, সেই সঙ্গে ফেসবুকে দেখেছি। আজ চলে এলাম দেখার জন্য, বেশ ভালো লাগল। মিন্টুর প্রতিবেশী জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দেখি মিন্টু ভাইয়ের বাসায় লোকজন আসেন বাগানটি দেখার জন্য। 
মিন্টুর আরেক প্রতিবেশী ও বন্ধু ঘোষপাড়া মহল্লার ব্যবসায়ী জামান জানান, মিন্টু ছাদে সবজি চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাই আমিও আশা করছি, ছাদে সবজি আবাদ করব। ছাদে সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলবেন। 
মিন্টু আহমেদ বলেন, আমার মতে, যাদের বাসার ঘরের ছাদ আছে, তারা সবাই এমন বাগান করতে পারে। এটি যেমন ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, ঠিক তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।  মিন্টু আরো জানান, এতে শুধু জৈব সার ও নিয়মিত পানি সেচ দিতে হয়। কারণ, শাকসবজি ও বাগানের গাছগুলো যেহেতু সাধারণ মাটির সংস্পর্শ হতে দূরে থাকে। তাই নিয়মিত পানি সেচ দেয়া জরুরি। এ বছর প্রায় বেগুন শাক, শিম বিক্রি করে প্রায় ৩ হাজার টাকা আয় করেছি। আশা করছি, সর্ম্পূণ ছাদে মরিচ, লাউ,লেবু চাষ করব এতে বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আবদুল আজিজ বলেন, মিন্টু আহমেদ বাসার ছাদে অসাধারণ একটি বাগান করেছেন। অনেকেই বাড়ির ছাদে ফুলের টপে শোভাবর্ধনের জন্য ফুল রাখে। তবে যার ছাদে জায়গা বেশি তিনি অনায়াসে শীতকালীন শাকসবজি চাষ করতে পারেন। ঘোষপাড়া মহল্লার মিন্টু সেরকমই একজন সৌখিন সবজি চাষি। তিনি নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাতে ছাদে সবজি চাষ করছেন। নিজের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। 
তিনি আরো জানান,শহরের সবাই যদি নিজ-নিজ বাড়ির ছাদে সবজি আবাদ করে তবে সহজে সবুজ ও বিষমুক্ত সবজি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত ছাদে মাটির টপ ও প্লাস্টিক বস্তায় মাটি দিয়ে চারা লাগানোর পর একটু চর্চা করলেই সহজে সবজি পাওয়া সম্ভব। আর মিন্টু দেখে অনুকরণ করে অনেকেই এখন ছাদ বাগান করার চিন্তা করছেন। এটা আমাদের সমাজে ও প্রকৃতিগতভাবে ও কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন এ কৃষিবিদ।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়