বাসস
  ০৪ আগস্ট ২০২১, ১৪:৩২

মাইগভ প্ল্যাটফর্ম সরকারি সেবা গ্রহণকারীদের ভোগান্তি কমিয়েছে

॥ মো. রফিকুল ইসলাম ॥
ঢাকা, ৪ আগস্ট, ২০২১ (বাসস): ঢাকার আশুলিয়া এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার বেবি একটি গবাদি পশুর খামার করতে চান। কিন্তু খামারটি গড়ে তোলার জন্য তার নিজস্ব জমি নেই।
গবাদি পশুর খামার স্থাপনের জন্য কিভাবে এক টুকরো জমি পাওয়া যায় তা নিয়ে ফাতেমা ছয় মাস ধরে ভাবছেন। তবে, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এক টুকরো জমি তিনি খুঁজে পাননি। তাই বলে, প্রচেষ্টাও থামাননি। জমির খোঁজ করেই যাচ্ছিলেন। একদিন বাড়ির কাছাকাছি একটি পতিত জমির সন্ধান পেলেন। 
বাসস প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে ফাতেমা বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম কিভাবে পতিত খাস জমিটি ইজারা নেয়া যায়। জানতে পারি সরকার দীর্ঘমেয়াদে পতিত খাস জমি ইজারা দিয়ে থাকে। খাস জমিটির ইজারা নেয়ার জন্য,  কোথায়, কার কাছে যাবো মানুষের কাছে জানতে চেষ্টা করি। তবু এই বিষয়ে জানতে পরিনি।’
তিনি জানান, পরে তিনি স্বামীর কাছ থেকেই ‘মাইগভ অ্যাপ’ এর মাধ্যমে পতিত খাস জমি ইজারা নিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবেদন করার বিষয়টি জানতে পারেন। 
ফাতেমা বলেন, ‘আমি অ্যাপটি ব্যবহার করে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অকৃষি খাস জমিটি ইজারা  নেওয়ার জন্য আবেদন করি। কর্তৃপক্ষ আমার আবেদন গ্রহণ করেছে এবং আমাকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা আমার আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করছে এবং পরে আমাকে এ সম্পর্কে জানানো হবে।’
প্রচলিত পদ্ধতিতে খাস জমির ইজারা নেয়ার জন্য আবেদন জমা দেয়া খুবই সময় সাপেক্ষ এবং জটিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে, অ্যাপটি ব্যবহার করে আবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। আমি এটি করতে কোনও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি।’
রাজধানীর মতিঝিলের ইসমাইল হোসেন একটি ইন্টারনেট ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছিলেন এবং মাইগভ অ্যাপ ব্যবহার করে তিনি এই লক্ষ্যে লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর বরাবর আবেদন করেছেন।
ইসমাইল বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে আমি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র জমা দিয়েছি। বিটিআরসি আমাকে জানিয়েছে, এখন এই লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়াটি স্থগিত রয়েছে, তবে, পুনরায় শুরু হলে আমাকে লাইসেন্স দেয়া হবে।’
ফাতেমা এবং ইসমাইলের মতো, অসংখ্য মানুষ এখন সরকারি সেবাপ্রার্থী হিসেবে ‘মাইগভ অ্যাপ’ বা ‘একসেবা’ উদ্যোক্তা (সব সরকারি পরিষেবা এক জায়গায়) অ্যাপ ব্যবহার করে সরকারি অফিসগুলোতে তাদের আবেদনপত্র জমা দিতে পারেন।
নেত্রকোনা সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) সেলিম মিয়া জানান, তার অফিস ডিজিটালি জমি সম্পর্কিত সেবা প্রদান করে আসছে। তিনি বলেন, “আমরা ই-নামজারি এবং অন্যান্য ই-ভূমি সেবা দিচ্ছি এবং অনলাইনে শুনানিও করছি।”
সরকারি সেবাগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনার লক্ষ্যে মাইগভ প্ল্যাটফর্মটি চালু করা হয়। ব্যবহারকারীরা অ্যাপ এর মাধ্যমে তাদের ফোন থেকে ৩৩৩ ডায়াল করে বিভিন্ন তথ্য এবং সেবা পেতে পারেন।
প্রয়োজনীয় তথ্য সেবা, আবেদন এবং নথি জমা দেয়া, আবেদনপত্রের ফি প্রদান এবং আবেদন করার পরবর্তী পোস্টগুলোর আপডেট অ্যাপটিতে পাওয়া যায়। কেবল ভয়েস ব্যবহার, সেবা অ্যাপ্লিকেশন, আপডেট এবং অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে জানা যায়। আবেদনকারীদের পরিচয় জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।
অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) কর্মসূচির সংশ্লিষ্ট কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, দ্রুত ডিজিটাইজেশনের আওতায় এই প্ল্যাটফর্মটি ইতিমধ্যে প্রায় ১,০৫৬ ধরণের সেবা ডিজিটালাইজড করেছে। আর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২.৩৮ লাখ মানুষ সরকারি সেবা পেতে মাইগভ অ্যাপ ব্যবহার করেছে।
এটুআই কর্মসূচির এন্টারপ্রাইজ ইন্টিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ মঞ্জুর আহমেদ বলেন, দেশের মানুষ এখন মাইগভ প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে ৪৫০ ধরনের সরকারি সেবা নিতে পারছেন। তিনি বলেন, চলতি বছরেই শিক্ষা ও কৃষিসহ আরও প্রায় ২ হাজার ধরনের সরকারি সেবা এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হবে।
তিনি জানান, মাইগভ অ্যাপ ব্যবহার করে সেবা গ্রহণের জন্য সেবা গ্রহীতার স্মার্ট ফোনের প্রয়োজন হয়। তবে, আবেদনকারীরা যাতে ধীর গতির ইন্টারনেটে অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য সেবা  গ্রহণের প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। 
তিনি আরও বলেন, ‘স্মার্ট ফোন নেই এমন ব্যক্তিরা যাতে ৩৩৩ নম্বরে ডায়াল করে সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারেন এবং যাদের মোবাইল ফোন নেই তারা ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল কেন্দ্রগুলো থেকে সেবা পেতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
একবিংশ শতাব্দীতে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকার দেশকে একটি জ্ঞান ভিত্তিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,ব্যবস্থাপনা, কাজের পদ্ধতি, শিল্প, বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডসহ সকল স্তরের সেবা ডিজিটালাইজড করা হবে।
সরকার গত ১২ বছর ধরে “ভিশন-২০২১-ডিজিটাল বাংলাদেশ” বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে গ্রামীণ এবং শহর উভয় অঞ্চলের মানুষ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সুবিধা ভোগ করছেন। দেশজুড়ে এমনকি প্রান্তিক অঞ্চলের নাগরিকরাও সহজে, সময়োপযোগী এবং স্বল্প ব্যয়ে সেবা পাচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এটুআই ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই একটি উদ্যোগ ‘মাইগভ প্লাটফর্ম’।
‘মাইগভ’ একটি কেন্দ্রীয় একক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যার অধীনে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ডিজিটাল সেবা দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে সব সরকারি সেবার ডিজিটালাইজেশন চলছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, পর্যায়ক্রমে সব মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সেবা মাইগভ প্ল্যাটফর্মের সাথে সমন্বিত করা হবে, যাতে মানুষ একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে সব ধরনের সেবা প্রহণ করতে পারে। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে স্বল্প ব্যয়ে অনলাইনে যে কোন প্রকারের নথি সংগ্রহ এবং মূল্য পরিশোধ করাও সম্ভব।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়