বাসস
  ০৩ জুলাই ২০২২, ২০:০০

আলবদর কমান্ডার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত রজব আলী গ্রেফতার

ঢাকা, ৩ জুলাই, ২০২২ (বাসস): মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
তাকে শনিবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র‌্যাব সূত্র জানায়, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৭টি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ মে  ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত।
আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। 
খন্দকার আল মঈন বলেন, আমিনুল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। তিনি ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নকালে পাকিস্তান ইসলামি ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।
র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে ওই এলাকায় ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন করেন। কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হবিগঞ্জের লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চন্ডীপুর গ্রামে এবং কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট ও নির্যাতন করেন। এ ছাড়া স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করেন।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমিনুল ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। ওইসব মামলায় তার ৪০ বছরের সাজা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় মাত্র তিনি ১০ বছর সাজা ভোগের পর ১৯৮১ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৯৭ সালে তিনি এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন।
র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হলে আমিনুল আত্মগোপনে চলে যান। তিনি গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেন। 
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেফতারকৃত আমিনুল ‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ নামের দু’টি বই প্রকাশ করে। এসব বইয়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের দিনসহ বিভিন্ন বিষয় নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেন। বইয়ে নিজেকে তিনি ‘আলবদর কমান্ডার’ হিসেবে দাবি করেন। ২০১৪ সালে তার প্রকাশিত ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ বইয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশ করায় বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা করা হয়।
আমিনুলের দুই মেয়ে। তারা সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তাদের ছাড়া তিনি সচরাচর কারও সঙ্গে কথাও বলতেন না। তিনি একাধিকবার পাকিস্তানে গেছেন।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়