॥ মাহফুজা জেসমিন ॥
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম ধাপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগ। এই দশ উদ্যোগে আলাদাভাবে নারীর ক্ষমতায়নের উপর বিশেষ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দশটি উদ্যোগেই নারীর ক্ষমতায়নের পথকে কোন না কোনভাবে সুপ্রশস্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প আমার বাড়ি আমার খামার (পূর্ব নাম ছিলো একটি বাড়ি একটি খামার) প্রকল্পের অধীনে গড়ে ওঠা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা ৬০ শতাংশ উপকারভোগীই নারী।
প্রকল্প কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী তহবিলের ব্যবস্থা করা এবং ওই তহবিল আয়বর্ধক কাজে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করে স্থায়ী আয়ের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্বাবধানে এ প্রকল্প শুরু করা হয়। এই প্রকল্পের অধীনে একটি গ্রাম বা ওয়ার্ডের ৬০ জন (৪০ জন নারী ও ২০ জন পুরুষ) দরিদ্র মানুষকে নিয়ে একটি সমিতি গঠন করা হয়।
সমিতির প্রত্যেক সদস্য মাসে ২০০ টাকা করে সঞ্চয় করেন। নিজস্ব সঞ্চয়ের সাথে সরকারের তহবিল থেকে সমপরিমাণ টাকাসহ প্রত্যেক সদস্য আয়বর্ধক কাজে ঋণ নিতে পারেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রায় ২ কোটি পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করা হয়েছে।
সুত্র জানায়, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের ‘ বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সাথে কাজ করছে। এ ব্যাংকের ৪৯% শতাংশের মালিক প্রকল্পের উপকারভোগীগণ। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সদস্যদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ভিত্তিতেই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গড়ে উঠেছে। জনপ্রতি মাসিক ২০০ টাকা সঞ্চয় করে এই প্রকল্পের উপকারভোগীরাই এখন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ৪৯% শতাংশের অংশীদার এবং নিজেদের সঞ্চয়ের টাকায় তারা স্বাবলম্বী।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মহাব্যাবস্থাপক দীপংকর রায় বাসসকে বলেন, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের শুরুতে যে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয় সেখানে প্রত্যেক সমিতিতে ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ন্যুনতম ৪০ জন নারী সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। এর ফলে দেখা যায় যে, নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে যারা এই সমিতির মাধ্যমে সাবলম্বী হয়েছেন তাদের ৬০ শতাংশই নারী।
তিনি বলেন, ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে এখন যদি ৬০ লাখ সদস্য থেকে থাকে তাহলে তার মধ্যে ৪০ লাখই নারী সদস্য। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে গ্রামীণ গৃহিনী নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার এক নিভৃত লক্ষ্য বিদ্যমান ছিলো। অন্যদিকে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি সমাজকে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার শিক্ষাও দিয়েছে।’
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের অধীনে গঠিত গ্রাম উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে যৌতুক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালানো হয়। নারীদের আয়বর্ধক কাজে নিয়োজিত করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা এবং নারীর আর্থিক ও সমাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।