বাসস
  ০৫ মার্চ ২০২২, ১৭:৩৪

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলা আমার জীবনের চিরস্মরণীয় অধ্যায় : মকছুদ আহমেদ

॥ মনসুর আহম্মেদ ॥
রাঙ্গামাটি, ৫ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অন্যান্য সমতল জেলাগুলোর মতো দূর্গম পাহাড়ী এলাকা রাঙ্গামাটিতে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সফর করেছিলেন তিনবার। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটির রিজার্ভবাজার এলাকায় নির্বাচনী জনসভায় প্রথমবার, ১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটিতে দ্বিতীয়বার সফরে আসেন এরপর ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করতে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া সফর করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন সময় ৫ বার খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন (সেই সময়ের তরুণ সাংবাদিক) বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রবীণ সাংবাদিক আলহাজ এ কে এম মকছুদ আহমেদ।
 সেই সময়কার স্মৃতিবিজড়িত ঘটনা নিয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ সাংবাদিক মকছুদ আহমেদ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি তৎকালীন সময়ে বেসরকারী বার্তা সংস্থা এনা এবং দৈনিক আজাদীর রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করার সুযোগে রিপোর্ট সংগ্রহের কাজে রাঙ্গামাটিতে বঙ্গবন্ধুর সফরকালীন তিন বার বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি এবং ব্যক্তিগতভাবে ২ বার জাতির পিতার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে প্রথমবার দেখার বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এই প্রবীন সাংবাদিক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) বলেন, ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে আমার তৎকালীন শিক্ষক ও মামার বন্ধু সৈয়দ মোহাম্মদ ফজলুল হক বিএসসির সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার ইসলামপুর স্টুডেন্টস পাবলিকেশন নামের প্রকাশনা সংস্থাতে যাই। সে সময় আমার মামা একটি জরুরী কাজে বাইরে আছেন জানিয়ে আমাকে প্রকাশনা সংস্থার ম্যানেজার মশিউদ্দৌলা সাহেব ৩য় তলায় গিয়ে আপাতত অপেক্ষা করতে বলেন।
আমিও ওনার কথামতো ৩য় তলায় উঠেই দেখি সেখানে একটা রুমে তৎকালীন সময়ের মিরেশ^রাই ও ফটিকছড়ির এমএলএ ফজলুল হক বিএসসি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও সেই সময়ের একজন কর্মকর্তা হাদিস আহমেদ নিজামী আলাপ করছিলেন।
এসময় বঙ্গবন্ধু হঠাৎ আমাকে দেখে বলেন, তুমি কেডা? তখন বিএসসি সাহেব আমাকে দেখে বললেন- সে আমার ছাত্র ও বন্ধুর ভাগিনা। বঙ্গবন্ধু বললেন- তুমি কি কর? আমি বললাম, আমি ছাত্র সবেমাত্র ম্যাট্রিক পাশ করেছি। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমার গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন-ভালো করে লেখাপড়া শিখ। এই স্মৃতিটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে এটাই আমার খুব কাছ থেকে প্রথমবারের মতো দেখা।
অত্যন্ত আবেগাপ্লুত হয়ে এ কে এম মকছুদ আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ২য় বারের মতো খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পর। সে সময় খাগড়াছড়ির পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে ওপারে চাল পাচারকালে বিডিআর কর্তৃক বেশ কিছু চাল আটক করে খোলা বাজারে ১০টাকা করে বিক্রির বিষয়ে আমার করা একটি রিপোর্ট বেসরকারী বার্তা সংস্থা এনার বরাত দিয়ে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও দৈনিক সংবাদে রিপোর্টটিকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করায় সেই সময়ের খাগড়াছড়ির এম এন এ প্রয়াত মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা আমার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে নালিশ করলে সে রিপোর্টের বিষয়ে কৈফিয়ত দেয়ার জন্য এনা অফিসের মাধ্যমে বঙ্গভবনে আমাকে ডাকা হয়।
যথারীতি আমি ঢাকা এনা অফিস থেকে পত্রিকার কাটিং নিয়ে বেলা ১১টার দিকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করি, সেখানে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও ছিলেন। তখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন লারমা সাহেব। আমিও সেসময় প্রকাশিত পত্রিকার কাটিংগুলো দিয়ে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খন্ডন করার চেষ্টা করি।
তখন সবকিছু দেখে বঙ্গবন্ধু বললেন, সাংবাদিকের দোষ নাই, পত্রিকাটি ভূল করেছে। তখনও বঙ্গবন্ধু কাছে ডেকে নিয়ে বললেন যাও ঠিক করে সাংবাদিকতা করবে। তখন বঙ্গবন্ধু আমাকে আসা যাওয়ার খরচের জন্য একজনকে ১ হাজার টাকা দিতে বলেন। এটা ছিল আমার পেশাগত জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং আমার জন্য টার্নিং পয়েন্ট। তখন বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে অনেক উৎসাহিত হয়েছিলাম এবং নিজেকে মনে হলো আমি একা নই, আমার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দোয়া আছে।
মকছুদ আহমেদ আরো বলেন, সব কাজ শেষে সেদিন দুপুরে আমি বঙ্গভবনে খাওয়া-দাওয়া করি। সেখানে পরিচয় হয়েছিল তৎকালীন সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ফটোগ্রাফার রশিদ তালুকদারের সাথে। পরে জানতে পারি তিনি তখন দৈনিক ইত্তেফাকে ও কাজ করেন।
 সেদিনের স্মৃতিগুলো এখনো অম্লাণ হয়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের চারণ সাংবাদিক মকছুদ আহমেদের কাছে।
রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ এই সাংবাদিক বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি তার সম্পাদনায় রাঙ্গামাটি থেকে দৈনিক গিরিদর্পণ নামে একটি পত্রিকা ও নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কাছে থেকে দেখার মধ্যে যে ক’জন ব্যক্তি এখনো বেঁেচ আছেন তাদের মধ্যে সাংবাদিক এ কে এম মকছুদ আহমেদ একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
পাহাড়ের গুণী এসব মানুষগুলো আরো সফলভাবে এগিয়ে যাক এবং তাদের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতির স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিময় কিছু অধ্যায়ের কথা জানতে পারবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এটাই সকলের প্রত্যাশা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়