বাসস
  ০৪ মার্চ ২০২২, ১২:০৪

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পান্তা ভাত খাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম : আজিম উদ্দিন আহমেদ

॥ আরিফুল আমীন রিজভী ॥
ফেনী, ৪ মার্চ, ২০২২ (বাসস) : ‘আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের পর বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুক্তির প্রাক্কালে মতিউর রহমান সাহেব জহিরুল ইসলামকে (ইসলাম গ্রুপ) খবর পাঠান, তিনি যেন দু’টো খোলা জিপ নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের এক নম্বর গেইটে অবস্থান করেন। কথামতো উল্লেখিত স্থানে বঙ্গবন্ধুর জন্য জিপ নিয়ে গেছি। কিন্তু জনসমুদ্রের তোড়ে সেদিন কোথায় ভেসে গেছি, নিজেই বুঝতে পারিনি।’
সেদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা না হলেও আশিতিপর আজিম উদ্দিন আহমেদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম দেখা পেয়েছিলেন ১৯৬১ সালে। তিনি জানান, সেসময় তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। হৃদ্যতা ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতা রংপুরের মতিউর রহমানের সঙ্গে।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার সন্তান, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাসায় প্রথম যাতায়াত হয় ১৯৬১ সালের শেষে। তখন রাজনৈতিক নেতা হলেও পরবর্তীতে ব্যবসায়িক সঙ্গী মতিউর রহমান ও তাঁর স্ত্রীসহ সেবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাই। তখন আমি চট্টগ্রাম সিটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
তিনি বলেন, ঘরে ঢুকে আমি ও ভাবী পা ছুঁয়ে সালাম করি। তখন নিচতলায় দুটো শোবার ঘর ছিল। বসার ঘরে পুরনো আমলের ড্যানিশ সোফা। সিঁড়ি ঘরে তখন বঙ্গবন্ধুর একজন ভাগনে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু লুঙ্গি পরেই ছিলেন। চা আর মুড়ি ছিল নাস্তা, সাথে ছিল বঙ্গবন্ধুর দরদ মাখা স্নেহ। এরপরের দিন চট্টগ্রাম ফিরে যাই।
১৯৬৩ সালে বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার দেখার সুযোগ পান বলে জানান তিনি। মতিউর রহমানের শান্তিনগর চামেলীবাগের বাসাতে এক সকালে ঘুম ভেঙে বঙ্গবন্ধুকে আবিষ্কার করেন। দিনটি ছিল জুন-জুলাই মাসের কোনো একদিন। তিনি বলেন, মতিউর রহমান সাহেবের বাসায় উক্ত দিন সকালে বঙ্গবন্ধু আসেন। নাস্তার টেবিলে বসে নিজের পছন্দে পান্তা ভাত খেয়েছিলেন। একই টেবিলে আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে বসে পান্তা ভাত খাওয়ার অমূল্য সুযোগ পেয়েছিলাম। খাবারের ফাঁকে-ফাঁকে আমার খোঁজ খবর নিলেন, আমি তখন আবেগ আপ্লুত।
আজিম উদ্দিন বলেন, ১৯৬৩ সালের শেষে স্থায়ীভাবে ঢাকা চলে আসি। ১৯৬৪ সালের মার্চের দিকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়। এসময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ উল্লাহর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছি পাশাপাশি পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলি। এসময়গুলোতে বঙ্গবন্ধু দলীয় কার্যালয়ে এলে দেখা হত। তিনি যুবকদের গাল টেনে স্নেহাশিস দিতেন এবং কুশলাদি জানতেন। এসময়ে নিত্যসঙ্গী ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ী নিজাম ও শাহজাহান। তারা দু’জনই পুরান ঢাকার স্থায়ী নিবাসী।
ব্যবসাবান্ধব বঙ্গবন্ধু সরকার প্রসঙ্গে আজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৭২ সালের শেষের দিকে আমি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতা। সেসময় অযাচিতভাবে লবণ সংকট দেখা দেয় এবং দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করছিল ঢাকা চেম্বার সভাপতি মতিউর রহমানসহ ব্যবসায়ীরা। তৎকালীন মধুমিতা হলের মালিক সিরাজ সাহেবসহ বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে বসি। আলাপ আলোচনার পর লবণ সরবরাহে করণীয় আলোচনা হয়েছিল। ঘরোয়াভাবে এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখা।
নিজের অনুভূতি প্রকাশে আজিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসা করেছি, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দিয়েছি। এতকিছু করা সম্ভব হয়েছিল অনুকূল পরিবেশ থাকায়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ব্যবসার একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির পথ সুগম করেছিলেন। যে পথ ধরে তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছিল। যেসব উদ্যোক্তা তাঁর কাছাকাছি যেতে পেরেছে, তারা উন্নতি করেছে। কারণ, তিনি অনুপ্রেরণা দিতেন। তাঁর হাতে ছোঁয়া আমার গায়ে লেগেছে, এটিই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া।