বাসস
  ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ২০:২৮
আপডেট  : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ২২:৪৬

পাঁচ ঘন্টার চেষ্টায় নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

নারায়ণগঞ্জ, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ (বাসস) : ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় অবস্থিত জাহিন নিটওয়্যার্স নামের রপ্তানীমুখি পোশাক কারখানার আগুন রাত ১০টায় নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার ব্রিগেডের ১৩টি ইউনিটের দেড়শ কর্মী প্রায় পাঁচ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন নির্বাপিত হতেও ফায়ার সার্ভিস ডাম্পিংয়ের কাজ করছিলো।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার ব্রিগেডের তেরোটি ইউনিটের দেড়শ কর্মী প্রায় পাঁচ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পরে বলা যাবে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার ব্রিগেডের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বা কেউ নিখোঁজ আছে বলে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ডাম্পিং শেষ হলে প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ফ্লোরে খুঁজে দেখা হবে কোথাও কেউ আগুনে হতাহত হয়েছেন কিনা। শুক্রবার বন্ধের দিন থানায় প্রতিষ্ঠানে খুব কম সংখ্যক শ্রমিক ছিলো। আগুনে প্রতিষ্ঠানের ষ্টিল স্ট্র্রাকচারের শেড অনেক জায়গায় ধ্বসে গেছে।  
প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটায় প্রতিষ্ঠানটিতে আগুন লাগে। বন্ধের দিন থাকায় প্রতিষ্ঠানটির মূল অংশ ছুটি ছিলো। তাই কারখানায় খুব অল্প সংখ্যক শ্রমিক ছিলেন।
প্রতিষ্ঠানের সুইং বিভাগের শ্রমিক হাবিব জানান, বিকেল পৌনে চারটার দিকে আগুন লাগে। প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষীরা প্রথম বের হয়ে ২ নং ইউনিটের সামনে ‘আগুন-আগুন’ বলে চিৎকার করতে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু শুক্রবার হওয়ায় বেশিরভাগ ইউনিট বন্ধ ছিলো। তবে প্রতিটি ইউনিটে কিছু শ্রমিক তৈরী পোশাক প্যাকেট করে শিপমেন্টের জন্য ৬ নং ইউনিটে সরানোর কাজ করছিলো।  
প্রতিষ্ঠানের আশে-পাশে বেশ কিছু শ্রমিক বসবাস করেন। দূর থেকে ধোর্ঁয়া দেখে তারা আগুন নেভাতে আসেন। প্রচুর ধোঁয়া পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ার কারনে পাশের ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা ফ্যাক্টরির ২ নং ইউনিটের দো’তলা শেডের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে শ্রমিকরা সেখানে ঢুকে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে দেন যাতে ধোঁয়া বের হতে পারে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে তারা নেমে এসে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন।
খবর পেয়ে ফায়ার ব্রিগেড এসে আগুন নেভানো শুরু করে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, বিকেল সাড়ে চারটায় আগুন লাগার খবর পাই। বেলা পৌনে পাঁচটায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর একে-একে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও, বন্দরসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো এসে আগুন নেভানোর কাজ করতে থাকে। সন্ধ্যা সাতটায় এ রিপোর্ট লেখার সময় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছিলো। আগুন লাগার কারন সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। কারখানা কমপ্লেক্সের তিনটি দোতলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলাগুলোতে আগুন জ্বলছিলো। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।
প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক শফিউদ্দিন ভূইয়া জানান, আগুন লাগার পর-পর নিরাপত্তা রক্ষীরা ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দিতে বলেন। ফায়ার ব্রিগেড আসতে আসতে আগুন ২, ৪, ৫ ও ৬ নং ইউনিটে ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা কর্মীরা পাশের পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। পুলিশ বিদ্যুৎ বিভাগকে ফোন দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে প্রতিটি ইউনিটের উপরের অংশ স্টিল ষ্ট্রাকচারের। এই উপরের অংশ কাঠ ও বোর্ড দিয়ে ভেতরের অংশে ডেকোরেশন করা। আমরা মূলত গেঞ্জি, পলো শার্ট, জ্যাকেট, ট্রাইজার এসব তৈরী করি। প্রতিটি ইউনিটের উপরের অংশগুলিতে এসব তৈরী পোশাক ছিলো।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, কারখানার পরিসর বড় হওয়ায় এবং আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় নিয়ন্ত্রণে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। তবে কারখানা বন্ধ থাকার কারনে ভেতরে কোন শ্রমিক আটকা পড়েনি বলে আমরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি। কোনো হতাহতের খবর এখনও পাওয়া যায়নি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়