বাসস
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:১২

রাজশাহীতে কনকনে শীতে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়

শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে গরম কাপড় কিনতে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। ছবি : বাসস

\ওমর ফারুক\

রাজশাহী, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): রাজশাহী মহানগর ও এর আশেপাশের উপজেলায় কনকনে শীতে জনজীবনে চরম ভোগান্তি নেমে এসেছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুররা। গত কয়েকদিন ধরেই ঘন কুয়াশা, হিমেল বাতাস ও নিম্ন তাপমাত্রার কারণে রাজশাহীবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

শীতের এই প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে গরম কাপড় কিনতে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। উচ্চবিত্তরা বড় বড় মার্কেট থেকে গরম কাপড় কিনলেও নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষজন গরম কাপড় কিনতে ছুটছেন ফুটপাতের দোকানে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব দোকান ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে থাকছে। হঠাৎ তীব্র শীতে ক্রেতাদের চাপ বেশি থাকায় ফুটপাতের দোকানগুলোতেও তুলনামূলক দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে।

নগরীর সাহেব বাজার, গণকপাড়া, সোনাদিঘীর মোড়, কুমারপাড়া, নিউমার্কেট, লক্ষ্মীপুর মোড়, উপশহর, রেলগেট, বাস টার্মিনাল, রানীবাজার মোড়, কোর্ট স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। 

দোকানগুলোতে জ্যাকেট, সোয়েটার, শাল, মাফলার, টুপি ও কম্বল কিনছেন বিভিন্ন বয়সি মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন ফুটপাতের দোকানগুলোতে বেশি ভিড় করছেন। কারণ সেখানে তুলনামূলক কম দামে গরম কাপড় পাওয়া যাচ্ছে।

নগরীর সাহেব বাজারে শীতের কাপড় কিনতে এসেছিলের তপন আলী। বাসসের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই শীত বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছি। গরম কাপড় ছাড়া টিকতে না পারায় ফুটপাতে এসেছি শীতের কাপড় কিনতে। সকালে ঘর থেকে বের হওয়াই কষ্টকর। পরিবারের সবাইকে শীত থেকে বাঁচাতে ফুটপাত থেকেই গরম কাপড় কিনতে হচ্ছে। এখানে দাম একটু কম। তবে অন্য বছরের তুলনায় বেশি দাম নিচ্ছে। বিপাকে পড়ে কিনতেই হলো। 

গৃহবধূ সাবরিনা বেগম বলেন, এখন এমন শীত পড়েছে যে, সকাল, বিকাল ও রাত একইরকম ঠাণ্ডা পড়ছে। বাচ্চারা এই শীত সহ্য করতে পারছে না। এ জন্য জ্যাকেট আর সোয়েটার কিনতে এসেছি। নিজের জন্যও সোয়েটার কিনবো। 

রুমা বলেন, অনেক ঠাণ্ডা। তাই ফুটপাতের দোকানে কাপড় কিনতে এসেছি। ফুটপাতের এসব দোকানই এখন আমাদের ভরসা। তা ছাড়া এতো ঠাণ্ডা যে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বিপদে পড়বো।

ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা সাইফুর রহমান বাসসকে বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে শীতের পোশাকের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রি ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে শাল, জ্যাকেট আর কম্বলের চাহিদা বেশি। বিক্রি বেশি তাই লাভও বেশি হচ্ছে।’ 

এদিকে, নগরের রানীবাজারে অবস্থিত কম্বলের দোকানগুলোতেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। ক্রেতারা কম্বল কিনতে ছুটছেন সেসব দোকানে। সামিয়া নামের এক নারী বলেন, এতদিন অন্যকিছু দিয়ে চালিয়ে নিয়েছি। এখন বেশি ঠাণ্ডা পড়ায় আর থাকা যাচ্ছে না। এজন্য কম্বল কিনতে এসেছি।  

কম্বল বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্য যেকোনো সময়ের থেকে এখন বিক্রি বেড়েছে। ঠাণ্ডা অব্যাহত থাকলে বেচাকেনা আরো বাড়বে। 

এদিকে শীতের এই তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। সকালে কাজের সন্ধানে বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষদের অনেকেই শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে অল্প আয়ের মধ্যেই গরম কাপড় কিনছেন।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রহিদুল ইসলাম বাসসকে জানান, আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ৩০ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২৯ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা শিশু ও বয়স্কদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন, পর্যাপ্ত গরম কাপড় ব্যবহার এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।