শিরোনাম

এ.এস.এম.নাসিম
নোয়াখালী, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার মেঘনা নদীর বুকে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন চর চর আতাউর। বিভিন্ন সময় নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো মানুষ এই চরে বাস করেন। প্রতিদিন নদীর জোয়ারে চরের চারপাশকে পানিতে ভিজিয়ে গেলেও সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগতে হয় চরের বাসিন্দাদের। নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি হওয়ায় পানির জন্য মাটিতে গর্ত করে সেখানে পানি জমে ওঠার অপেক্ষা করতে হয়। পশু-পাখি ও গবাদি পশুদের পানের জন্যও ব্যবহার করা হয় একই পানি। বিশুদ্ধ পানির সংকটে এই চরের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুটি গুচ্ছগ্রাম ও একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে গঠিত চর আতাউরে প্রায় চার শত পরিবারের বসবাস। চরটিতে কয়েক বছর আগে সরকারিভাবে দুটি বড় পুকুর খনন করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে অস্বাভাবিক জোয়ারে পুকুরের পাড় ভেঙে নদীর পানি ঢুকে পড়ে। দিনে দিনে তাতে পলি জমে পুকুর দুটি সমতল হয়ে গেছে। এখন আর পানি জমা থাকে না। এছাড়া বাসিন্দাদের জন্য বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে চরটিতে চারটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি অনেক আগেই বিকল হয়ে গেছে। বাকি একটি থাকলেও সংস্কারের অভাবে সেটিও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে।
চরবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, টিউবয়েল না থাকায় ও পুকুরগুলোতে পানি না জমায় বাধ্য হয়ে নদীর লোনা পানি পান করতে হয় তাদের। দীর্ঘদিন লবণাক্ত পানি পানে চরটির বাসিন্দাদের চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে নিজেদের প্রচেষ্টায় এখানকার বাসিন্দারা নিজ নিজ ঘরের সামনে মাটিতে গর্ত করে পানি জমিয়ে ব্যবহার করছেন। শুধু মানুষ নয়, গৃহপালিত পশু পাখিও সেই পানি ব্যবহার করে বেঁচে আছে।
সরেজমিনে চরে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারগুলোর নারী সদস্যরা ঘরের সামনে মাটি কেটে তৈরি করা গর্তের মধ্যে আসবাবপত্র পরিষ্কার করছেন। কেউ কেউ রান্নার কাজে এই পানি ব্যবহার করেন। নদীতে থাকা লোনা পানিতে অনেকের অ্যালার্জিসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। তাই গর্তের এই পানিতে তাদের দৈনন্দিন কাজ সারতে হচ্ছে।
চরের বাসিন্দাদের মতে, আনুমানিক পনেরো-বিশ বছর আগে চরটি জেগে উঠলেও গত সাত বছর আগে এখানে বসবাস শুরু করেন তারা। তরুবীথি ও ছায়াবীথি নামে দুটি গুচ্ছ গ্রামে শুরুর দিকে দুই শতাধিক লোকের বসবাস ছিল। যা বেড়ে এখন প্রায় ২ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এখন শীত মৌসুম শুরু হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিছুদিন পর গর্তের পানি শুকিয়ে যাবে। তখন গরু ছাগল ও নিজেদের প্রয়োজন মেটানো অনেক কঠিন হবে।
চরের বাসিন্দা আল আমিন বাসসকে বলেন, এখানে সারা বছর পানির কষ্ট করতে হয়। চারপাশে এত পানি থাকার পরও আমরা খাবার ও ব্যবহারের জন্য বিশুদ্ধ পানি পাই না। লোনা পানি একটানা ব্যবহারের কারণে চরের অধিকাংশ মানুষের অ্যালার্জি ও চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।
জয়নাল মিয়া জানান, আমাদের পুকুরগুলো পলিমাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। এর পাড়গুলো যদি সময়মতো সংস্কার করা হতো তাহলে আমাদের এই সংকটে পড়তে হতো না। নদীর লোনা পানি পান করে তৃপ্তি পাই না। ভালো পানি না থাকায় এখন খাবারের স্বাদ বুঝি না। সব কেমন জানি লোনা লাগে।
রোকসানা খাতুন বলেন, ‘গত সাত বছর ধরে এই চরে বসবাস করি। শুরুতে পুকুর ও টিউবয়েল দুটোই ছিল। এখন কিছুই নেই পানির জন্য ঘরের পাশে জমিতে আমরা গর্ত করে রাখি। খাবার পানির পাশাপাশি টয়লেটে ব্যবহারের জন্যও পানি এখান থেকে নিতে হয়। এতে নারী, শিশু ও কিশোরীদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। পানির অভাবে প্রতিদিন গোসল করাও যায় না। গ্রীষ্মকালে এই ভোগান্তি আরো বাড়বে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কিশোরী জানান, অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনে টয়লেটে যেতে হলেও দূর থেকে পানি আনতে হয়। আবার এই পানি ব্যবহার করতে করতে চর্মসহ বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেগুলো লজ্জায় কারো কাছে প্রকাশও করতে পারি না। পাশাপাশি এখানে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও নিতে পারছি না। আবার চাইলেও প্রতিদিন গোসল করতে পারি না।
আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই। পুকুরগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নতুন ডিপ টিউবয়েল স্থাপন করা হলে এখানকার বাসিন্দাদের পানির সমস্যার সমাধান হবে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, চর আতাউরে বসবাসকারী ভূমিহীনদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা কাজ করছি। চরে সুপেয় পানির সংকট আছে। আমরা ইতোমধ্যে সেখানে নতুন একটি পুকুর খনন করার পরিকল্পনা করছি। এছাড়া আগের পুকুরগুলো পুনরায় খনন করা যায় কি না তাও দেখা হচ্ছে।