শিরোনাম

\ নুসরাত সুপ্তি \
নারায়ণগঞ্জ, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রকৃতিতে চলছে পৌষ মাস। শিশির ভেজা সকালে খেজুরের রস খেতে দূর-দূরান্তে ছুটে যায় ভোজন রসিকরা। সকাল হতে না হতেই শীতকে উপেক্ষা করে রসের টানে মানুষ ছুটে যায় খেজুর বাগানে। ফেরে খেজুর রসের চেনা স্বাদে মাতোয়ারা হয়ে। রস আস্বাদনের দৃশ্যগুলো অনেকেরই চেনা। কিন্তু ইট-পাথরের নগরে এ দৃশ্যের দেখা মেলা কঠিন। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কবিলের মোড় এলাকায় এসে দেখা মেলে সারি সারি খেজুর গাছ, বাগানের নাম ‘রস বাগিচা’। খেজুর রসের টানে পার্শ্ববর্তী জেলা ও শহর থেকে প্রতিদিন মানুষ ছুটে আসে এই খেজুর বাগানে।
নারায়ণগঞ্জের সাতজন তরুণ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শহরের মাঝে গড়ে তুলেছে এই বাগান। এখানে প্রায় ৪৬টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। অসংখ্য দালান কোঠার মধ্যে ছোট্ট একটা বাগান, যেখানে রস প্রেমীদের সামনেই গাছ থেকে খেজুর রস নামিয়ে সরবরাহ করা হয়। বিশুদ্ধ রস বিক্রি করে ইতোমধ্যে তারা বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।
গত বছর খেজুরের গাছসহ কবিলের মোড় এলাকায় একটি জায়গা লিজ নেন রস বাগিচার উদ্যোক্তাগণ। তারা হলেন, মোস্তাফিজুর রহমান, আহসান, সাইখুল ইসলাম, আব্দুর রহিম, জুনায়েদ রহমান, মাসুদ নূর ও জোবায়ের হোসেন। তারা প্রত্যেকে কেউ ব্যবসায়ী, কেউবা আবার চাকরিজীবী। কাছাকাছি বিশুদ্ধ রসের সন্ধান না পেয়ে শৌখিনতার বশে নিজেরাই রস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। আর বিশুদ্ধ রস বিক্রি করে প্রথম বছরেই বেশ পরিচিতি লাভ করে তাদের ফেসবুক পেজ ‘রস বাগিচা’। ভালো সাড়া পেয়ে এই বছরেও শুরু করেছেন রস বিক্রি। সন্ধ্যে হলে গাছে গাছে বাঁধা হয় হাঁড়ি। সকাল থেকেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে উঠেন গাছিরা। প্রতিদিন অন্তত ১৫০ থেকে ২০০ লিটার খেজুরের রস বিক্রি হয়। প্রতি লিটার ১৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
বাগানে গিয়েই দেখা মিলে দূরদূরান্ত থেকে গ্রাহকেরা রস পানে বাগানের গেটে অপেক্ষেয়মান। রস পান করে তারা বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানান রস যেমন সুস্বাদু তেমনি বিশুদ্ধ।
নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছেই অবস্থিত মুন্সিগঞ্জ থেকে চার বন্ধু ভোর বেলায় খেজুর বাগানে আসেন। তাদের মধ্যে একজন হাসান। তিনি বলেন, আমরা ফেসবুকে এই রসের অনেক সুনাম শুনেই এখানে এসেছিলাম। তাই ফজরের পরেই রওনা হয়ে চলে আসি। এসে দেখলাম, গাছ থেকে আমাদের সামনেই রস নামাচ্ছে। আর এই রস খেতে অসাধারণ।
তাদের সাথে আরও এক দল এসেছেন রাজধানীর আজিমপুর থেকে। সে দলের এক তরুণ রাব্বি বলেন, নারায়ণগঞ্জ তো ঢাকার পাশেই। আর শহরের মধ্যেই এমন খেজুর রস পাওয়া যাবে সেটা ভাবিনি। এখানের রসটা অনেক মজা। আর কোনো প্রাণী যেন রসে মুখ না দিতে পারে তারা সেই ব্যবস্থাও তারা করেছে দেখলাম। এ জন্যই একদিন আগে তাদের অগ্রিম জানিয়ে এখানে এসেছি।
প্রতিদিন নারায়য়ণগঞ্জের পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে রস প্রেমীরা ছুটে আসেন বিশুদ্ধ রসের সন্ধানে। ভোক্তাদের চোখের সামনেই রস সংগ্রহ করায় তারা বিশুদ্ধতার বিষয়টি নিশ্চিত থাকেন। সেই সঙ্গে বাদুড়ের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি হাঁড়ি ঢেকে রাখা হয়। ফলে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমনের ভয় নেই বলে জানান উদ্যোক্তারা।
এছাড়াও রসের চাহিদা এত বেশি যে, ‘রস বাগিচা’ এর উদ্যোক্তাদের না জানিয়ে আসলে খেজুরের রস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রস বাগিচার উদ্যোক্তা জুবায়ের হোসেন বলেন, শহরের কাছাকাছি বিশুদ্ধ রস পাওয়া যায় না বললেই চলে, কোথাও রস পাওয়া গেলে সেটাও পানি মিশ্রিত। কংক্রিটের শহরে বিশুদ্ধ রস মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। ফেসবুক পেজ ‘রস বাগিচা’র মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে আমাদের কার্যক্রম।
তিনি বলেন, আমরা বন্ধুরা এই এলাকার ৪৬ গাছ নিয়ে আমাদের বাগিচার কাজ শুরু করেছিলাম। বর্তমানে ৭০ টি গাছ লিজ নিয়েছি। কারণ গত বছরের চেয়েও এই বছর আমরা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। এবং ভবিষ্যতে আমাদের আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে, নতুন নতুন খেজুর গাছ রোপণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি জানান, ফরিদপুর থেকে একজন গাছি এনেছি আমরা। তিনি রস সংগ্রহের কাজ করেন। রস খেতে হলে অনলাইনে আমাদের পেজের মাধ্যমে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়। পরদিন রসপ্রেমীরা আমাদের বাগানে এসে রস নিয়ে যান।