বাসস
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:১৫

খুলনার বিলডাকাতিয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা প্রণয়ন

জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বিলডাকাতিয়া অঞ্চলের জলাবদ্ধতার সমাধানকল্পে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি : বাসস

খুলনা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বিলডাকাতিয়া অঞ্চলের জলাবদ্ধতার সমাধানকল্পে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

গতকাল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) এবং ইনষ্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)র যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে উপজেলার আন্দুলিয়া কাদেরিয়া দাখিল মাদ্রাসা হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত জনসাধারণ গ্রুপ ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে বিদ্ধমান জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে করণীয় বিষয়ে তুলে ধরেন। প্রতি গ্রুপে ৮জন করে ৭টি দলের মতামতের ভিত্তিতে জলাবদ্ধতা কিভাবে উত্তরণ সম্ভব তা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিলডাকাতিয়া-মধুগ্রাম-মাধবকাটিসহ নিম্নাঞ্চলীয় বিলগুলোতে হামকুড়া নদী খনন করে ঘ্যাংরাইল নদীর সাথে টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর।

সভায় জানানো হয়, বিলডাকাতিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিনের। পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৯৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে কেজিডিআরপি প্রকল্প চালু করে। ওই প্রকল্পের আওতায় শোলমারি নদীতে ১০ ভেন্ট রেগুলেটর নির্মাণ করার পর বিলডাকাতিয়ায় জলাবদ্ধতা সমস্যা অনেকাংশে দূরীভূত হয়। সম্প্রতি শোলমারি ও ভদ্রা নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিলডাকাতিয়ায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকারে ধারণ করে। ২০২৪ সালে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ফলে ভবদহ, বিলডাকাতিয়া ও তৎসংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সমস্যা আরো তীব্র আকারে ধারণ করে। ডুমুরিয়া, ফুলতলা, খানজাহানআলী ও আড়ংঘাটা থানা এলাকার ৫২টি বিলে মোট ৯৮ হাজার হেক্টর জলাশয় ও ফসলি জমি রয়েছে। এরমধ্যে বিল ডাকাতিয়ায় রয়েছে ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমি।

আরও বলা হয়, জলাবদ্ধতার কারণে গত ৩ বছর বৃহত্তর এলাকার ফসলি জমি অনেকটা অজন্মা হয়ে পড়েছে। 

এছাড়া মধুগ্রাম বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র হামকুড়া নদীটি ৩০ বছর আগে ভরাট হয়ে গেছে। বিলের মধ্যে ছোট খালগুলোও প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে। তাছাড়া যত্রতত্র বিলের মধ্যে মাছের ঘের করার কারণেও পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশিত হতে বাঁধা প্রাপ্ত হচ্ছে। এসব কারণে এ অঞ্চল স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বর্ষা মৌসুমে শোলমারী স্লুইজ গেটের মুখে প্রতিবছর পলি অপসারণ কাজ করে। 

কিন্তু জলাবদ্ধতা থেকে আজো মুক্তি মেলেনি লাখো মানুষের। দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা সমাধানে জনগণের দাবি অবিলম্বে বিলডাকাতিয়ার পানি শৈলমারী নদী হয়ে কাজিবাছায় নিষ্কাশিত করাসহ কাজিবাছায় একটি ২১ ভেন্টের রেগুলেটর স্থাপন করার এবং হামকুড়া নদী খনন করে ঘ্যাংরাইল নদীর সাথে বিল ডাকাতিয়া-মধুগ্রাম ও মাধবকাটি বিলে টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের।

সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা পানি কমিটির সভাপতি ও ভবদহ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আবদুল মতলেব সরদার। ডুমুরিয়া উপজেলা পানি কমিটি সভাপতি প্রাক্তন সহ-অধ্যাপক জিএম আমান উল্লাহর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বাপাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নাছরিন আক্তার খান, বাপাউবোর যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্কেল, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বিএম আব্দুল মতিন, মো. নাজমুল হক, আইডব্লিউএমর উপদেষ্টা জহিরুল হক, পাউবোর খুলনা নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন ও আইডব্লিউএমর প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান।

জলাবদ্ধতা সমাধানে পরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ে বক্তব্য দেন, ইউপি চেয়ারম্যান মনোজিত বালা, সমরেশ মন্ডল ও সিয়াব উদ্দিন মোল্যা, মো. কবির হোসেন চৌধুরী, শিবুপদ জোয়াদ্দার, ফিরোজ মোড়ল, মাওলানা কামরুজ্জামান, আব্দুল হালিম, ওমর আলী আকুঞ্জি, উত্তরণ এনজিওর পরামর্শক ও গবেষক অধ্যাপক হাসেম আলী ফকির, সেলিম আক্তার স্বপন প্রমুখ।