ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ (বাসস) : তেত্রিশ বছর বয়সী সালেহা (ছদ্মনাম) একসময় কাজ করতেন যৌন কর্মী হিসেবে। তার ভাগ্য কখনোই সুপ্রসন্ন ছিল না। মাত্র দশ বছর বয়সে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় হারান বাবা-মাসহ এক ভাইকে। এরপর ঠাঁয় হয় মামা বাড়িতে। সেখানে তার ভরন-পোষনের দায়িত্ব নেন তার নানী। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সালেহার বয়স যখন মাত্র তের বছর তখন তার নানীও মারা যান।
নানীর মৃত্যুর পর থেকে শুরু হয় সালেহার উপর নির্যাতন। নানী যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন বেশ আদর-সোহাগেই ছিল সালেহা। নানীর মৃত্যুর পর তাকে দিয়েই সব কাজ করাতেন মামী। এক পর্যায়ে পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয় মারধর। তবে মামা যতক্ষণ বাসায় থাকতেন ততক্ষণ মোটামুটি ভালো ব্যবহার করতেন মামী। কিন্তু মামা বাসায় না থাকলেই শুরু হত নির্যাতন।
এক পর্যায়ে সালেহার সাথে পরিচয় হয় এক কথিত মামার। সে তাকে মামার বাসা ছেড়ে গার্মেন্ট এ কাজ করার প্রস্তাব দেয়। এভাবে দু’তিন মাস যাওয়ার পর সালেহা সিদ্ধান্ত নেয় সে গার্মেন্ট এ কাজ করবে। এক রাতে ওই কথিত মামার হাত ধরে পালিয়ে যায় বাসা থেকে গার্মেন্টসে এ কাজ করবে বলে। কিন্তু দূর্ভাগা সালেহাকে তার সেই কথিত মামা বিক্রী করে দেয় এক দালালের হাতে। দালালটি বাধ্য করে তাকে যৌন কর্মী হিসেবে কাজ করতে। আস্তে আস্তে সালেহা বিভিন্ন ধরেনর মাদকেও আসক্ত হয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন সালেহা। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় সালেহা এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত। এখন তিনি একটি স্থানীয় এনজির মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছন আর নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত বিভিন্ন এলাকার ভাসমান যৌন কর্মীদের মধ্যে ভয়াবহ এইডস সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাই তার কাজ।
জানা যায়, ১ ডিসেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ৮,৭৬১ জন এই এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালে আক্রান্ত হর্য়েছেন ৭২৯ জন। এছাড়া ২০২১ সাল পর্যন্ত মারা গেছেন ১,৫৮৮ জন। আর ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন ২০৫ জন।
এইচআইভি বিশ্বব্যাপী এক জনস্বাস্থ্য রোগ। এ পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ৩৬.৩ মিলিয়ন আক্রান্ত ব্যক্তি এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র মতে ২০২০ সালের শেষ মাস পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৭.৭ মিলিয়ন ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনযাপন করছেন। এছাড়া ২০২০ সালে প্রায় ৬,৮০,০০০ আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরন করেছেন বিশ্বব্যাপী।
প্রতি বছর ডিসম্বের ১ তারিখ বিশ্ব এইডস দিবস পালন করা হয়ে থাকে যার মাধমে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এইচআইভি’র বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরী করে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহস যোগায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণরুপে এইডস নির্মূল হবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেয় হয়েছে।
তিনি বলেন জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে এইচআইভি পরীক্ষার পরিকল্পনাও রয়েছে।
এইচআইভি এইডস নিয়ে সচেতনতা তৈরীতে কাজ করছেন ড. আনসার। তিনি বলেন, দেশে এ পর্যন্ত যেসব আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশের বয়স ১৯ বছর থেকে ৪৯ বছর। আর এদের মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, দেশে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সিংহভাগই শিরাতে মাদক গ্রহণ করতেন। এছাড়াও অনিরাপদ যৌন মিলনও কিছুটা দায়ী।
তাই সবাইকে এখন থেকে এই ভয়াবহ রোগ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এই বিশেষজ্ঞ।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/মহ/১৩৫০/স্বব