বাসস
  ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৩১

একটি ওয়েব সাইট ও মাকসুদার গল্প

ঢাকা, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ (বাসস) :  মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা থাকে, যা তার জীবনের মোর ঘুড়িয়ে  দিতে পারে।  বিশেষ করে বর্তমান ডিজিটাল যুগে  সামান্য  একটি ঘটনাই যে কত মানুষের  জীবন-জীবীকা  পাল্টে দিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মেধা, একাগ্রতা, পরিশ্রম মানুষের জীবনের  বাঁক ঘুড়িয়ে দিতে পারে।  জীবনে হয়তোবা  কোন দিন  কল্পনা করেনি এমন কিছুও জীবনে ঘটতে  পারে।  বর্তমান সমাজ পুরুষ শাসিত  হলেও এখানে  রয়েছে নারীর  সাফল্যের  কাহিনী।  বিশেষ করে  বাংলাদেশে ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীর  অংশ গ্রহণ ও সাফল্য  চোখে পড়ার মতই।  এক সময় চাকুরি করঔের পারিবারিক কারণে   তা ছেড়ে দিয়ে  অনেক নারীই  বেছে নিয়েছেন ব্যবসা।  তাদেরই  একজন  মাকসুদা খাতুন।  নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সদ্য সমাপ্ত  আট দিনব্যাপী এসএমই মেলায় স্টল  নিয়েছেন। ‘শাবাব লেদার’ নামের স্টলটি ছোট হলেও পন্যে ছিল ভরপুর। তার স্টলে বিশেষ করে পাওয়া যাচ্ছে চামড়ার তৈরী প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এসব পন্যের মধ্যে রয়েছে ব্যাগ, মানিব্যাগ এবং জ্যাকেটও। মেলায়  অনেক স্টল  আছে।  সবাই  মূলত  নিজেদের  পন্যের পসরা নিয়েই এখানে  বসেন।  কেবল মেলা থেকে বিক্রি নয়, এখান থেকেই  বিদেশেও অর্ডার  পাওয়াও থাকে অনেকের  লক্ষ্য। কেননা  বর্তমান যুগ যে বিজ্ঞানের যুগ, ডিজিটাল যুগ।  মেলায় বসেই  কথা হলো শাবাব লেদারের মালিক  মাকসুদার সাথে।  শোনালেন তার  ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার কাহিনী।
মাকসুদা বলেন, আমার পরিবারের কেউ কখনো ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল না। সবাই ছিলেন চাকরীজীবি। এমনকি নিজেও শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে পেশা জীবন শুরু করি। পরে শিক্ষকতা ছেড়ে একটি বায়িং হাউসে চাকরি। করি।
তিনি বলেন, আমার স্বামী শোয়েব হোসাইন চামড়ার ব্যবসা করতেন। তার ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু একবার বড় ধরনের লোকসান হয় ব্যবসায়। সে সময় দেনা শোধ করতে গিয়ে আমরা হিমশিম খেয়ে যাই। এমনকি আমাদের কেনা ফ্ল্যাটও বিক্রী করে দিতে হয়েছে। তারপরও দেনা শোধ হয়নি। আমিও বুঝতে পারছিলাম, শুধুমাত্র বায়িং হাউজে চাকরী করে এই দেনা শোধ করা সম্ভব নয়।
তখন কি করব আর আমার স্বামীকে কীভাবে সহযোগিতা করব, তা বুঝতে পারছিলাম না। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম যা হবে হোক আমি ব্যবসায়ই করব। ব্যাংকের সমস্ত সঞ্চয় ভেঙ্গে আর গয়না বিক্রী করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। প্রথমে হাজারীবাগে একটি দোকান নিই ‘শাবাব লেদার’। শুরুতে  পাঁচজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করি। শুরুতে কীভাবে পণ্য বিক্রী করব বুঝতে পারছিলাম না।
তিনি বলেন, পরে আমার পরিচিত বায়িং হাউসের ক্রেতাকে পন্যের ছবি মেইল করি। তারা আমাকে আমার প্রতিষ্ঠানের নাম –‘শাবাব লেদার’ দিয়ে একটি ওয়েবসাইট খোলার পরামর্শ দেন। সেই  পরামর্শ  অনুযায়ী আমি একটি ওয়েবসাইট খুলি আর পন্যের প্রচার করতে থাকি।
মাকসুদা বলেন, ২০১৭ সালের মার্চে একটি হঠাৎ করে এক ডাচ্ দম্পতি আমাকে বেশ কিছু ব্যাগের অর্ডার দেন। সেই থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পেতে থাকি একের পর এক অর্ডার। এখন আমাদের বছরে রপ্তানী আয় প্রায় দুই কোটি টাকা।
তিনি বলেন, অথচ ব্যবসা শুরুর প্রথম বছর আমি কী করব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এমনকি বিভিন্ন দোকানে গিয়ে গিয়ে পন্য বিক্রী করেছি। কিন্তু এখন দিন পাল্টে গেছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে নগরীর বসুন্ধরা শপিং মলে একটি শো-রুম নিয়েছি। ইচ্ছে আছে আস্তে আস্তে ব্যবসার পরিধি আরো বাড়ানোর।
মাকসুদা বলেন, মাঝে মাঝে ব্যবসার জন্য লোনও নিতে হয়েছে। আবার সময়মতো সেই লোনও পরিশোধ করতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, মূলত  একটি ওয়েব সাইটই আমার  ভাগ্য বদলে দিয়েছে।  তিনি বলেন  করোনার কারণে  গত প্রায় দুই বছরই  বিশ^ ব্যপি  অর্থিৈনতক  মন্দা  চলছে।  তবে  কিছু কিছু  পন্য আছে, যার চাহিদা  ঠিকই  ছিল।
মাকসুদার মতে  বর্তমান সরকারের গৃহীত নীতির কারণে  মহিলারা আজ সহজেই  ব্যাংক ঋণ পাচ্ছে।  তা ছাড়া ডিজিটাইজেশনের  কারণে  সব কিছুই  এখন ঘরে  বসে  জানা সম্ভব । তাই  সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ কাজে লাগিয়ে  নারী সমাজ আজ দেশের  অর্থনৈতিক  অগ্রগতিতে  অবদান রাখতে পারছে।
ব্যবসা ক্ষেত্রে  দেশের নারীরা  কিভাবে আরো  ভাল করতে পারে- জানতে চাইলে মাকসুদা বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের আরো কমানো দরকার।  নারীদের  প্রশিক্ষনের প্রয়োজন, যাতে তারা  সহজেই  সব কিছু বুঝতে পারে।  তবে  ব্যবসার জন্য নারীদের  বিশেষ সুবিধা  দেয়া গেলে দেশের  টেকসই উন্নয়ন  আরো তরান্বিত হবে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/এসএমএফ/মহ/১২৩৫/স্বব

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়