শিরোনাম

খুলনা, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): মানসম্মত মৎস্য রপ্তানি নিশ্চিত করতে ‘ই-ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম’ (ইলেকট্রনিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি)’ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন অংশীজনেরা।
‘সমৃদ্ধ অর্থনীতি ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট ফিশারিজ’ স্লোগানে খুলনায় চিংড়ি মাছ নিলাম কেন্দ্র থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা পর্যন্ত ই-ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম বাস্তবায়ন বিষয়ক ইনসেপশন কর্মশালায় বক্তারা আজ এ তাগিদ দেন। নগরীর শ্রীম্প টাওয়ার মিলনায়তনে আজ এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ফিশারি প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এফপি-বিপিসি) ও ফিশ ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ( ফোয়াব)-এর অর্থায়নে মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগ ও আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহযোগিতায় ফোয়াব এ কর্মশালা আয়োজন করে।
ফোয়াব-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ফোয়াবের প্রকল্প ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান মনির ও ফোয়াবের আইসিটি বিশেষজ্ঞ মাহমুদ-উর-রহমান।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, উন্নত ও মানসম্মত মৎস্য খাতের উন্নয়নে চিংড়ি থেকে শুরু করে সব ধরনের মাছ নিলাম কেন্দ্র থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
তারা বলেন, চিংড়ি সেক্টরে ইলেকট্রনিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি বাস্তবায়নের ফলে চিংড়ির গুণগত মান, নিরাপত্তা ও উৎস সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। যা আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থা বাড়ায়, রপ্তানি আয় স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং ভোক্তাদের কাছে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ চিংড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যা সামগ্রিকভাবে এ খাতের শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আনে।
কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান মনির তার উপস্থাপিত প্রবন্ধে ইলেকট্রনিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি বাস্তবায়নের সুফল তুলে ধরে বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে চিংড়ির উৎস ও গুণগত মান নিয়ে কঠোর নিয়ম রয়েছে। যা ই-ট্রেসেবিলিটির মাধ্যমে পূরণ করা যায়। এতে রপ্তানি বাড়ে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণ করে। পণ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়। যা ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ির সুনাম বৃদ্ধি করে।’
তিনি জানান, ইলেকট্রনিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি ব্যবহারে নিলাম কেন্দ্র বা হ্যাচারি থেকে শুরু করে খামার পর্যন্ত সব স্তরে স্বচ্ছতা ও নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক হওয়ায় শৃঙ্খলা ফিরে আসে। ফলে যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে (যেমন : কোনো রোগ বা দূষণ) ই- ট্রেসেবিলিটির কারণে দ্রুত উৎস শনাক্ত করে সমাধান করা যায়। একই সঙ্গে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। যা পণ্যের বাজার মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সর্বোপরি ই-ট্রেসেবিলিটি বাস্তবায়ন বাংলাদেশের চিংড়ি খাতকে একটি আধুনিক, নির্ভরযোগ্য এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক খাতে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও বিপিসির পরিচালক ড. রাজ্জাকুল ইসলাম, মৎস্য বিভাগ খুলনার উপপরিচালক বিপুল কুমার বসাক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. শেখ মোস্তাফিজুর রহমান, খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান, যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুল মামুন, মৎস্য পরিদর্শন ও মান-নিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো: আবুল হাসান, আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন চৌধুরী ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ)সহ-সভাপতি শেখ কামরুল আলম। পাইলটিং কার্যক্রমের উপর সূচনা বক্তৃতা করেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ আঞ্চলিক মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। সঞ্চালনা করেন আরিফা ইসলাম খুকুমনি।
এছাড়াও কর্মশালায় বিভিন্ন মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ও ডিপো মালিক, চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী, চিংড়ি চাষি, সরবরাহকারী, বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ফোয়াবের কার্যনির্বাহী সদস্য খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গোলাম কিবরিয়া রিপন দেশের শ্রেষ্ঠ চিংড়ি চাষি হিসেবে স্বর্ণ পদক পাওয়ায় তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।