শিরোনাম

ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশকে কার্যকর গণতান্ত্রিক রূপান্তর, শক্তিশালী জবাবদিহিতা ব্যবস্থা এবং বৈষম্যহীন ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য কার্যকর গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।
ড. মাহমুদ বলেন, ‘আজকের প্রত্যাশা খুবই সাধারণ-আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এই আশায় যে নতুন বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী শাসন কাঠামো গড়ে উঠবে।’
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বিআইডিএস উন্নয়ন সম্মেলন ২০২৫: গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিআইডিএস মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এ কে এনামুল হক।
উপদেষ্টা তিনটি মূল অগ্রাধিকার তুলে ধরেন: কার্যকর ও প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা; টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা; এবং উন্নয়নের মাধ্যমে বৈষম্য হ্রাস ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক পরও দেশ এখনো ‘কার্যকর গণতান্ত্রিক কাঠামো’ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে, যা অনেক আগেই অর্জিত হওয়া উচিত ছিল।
ড. মাহমুদ যুক্তি দেন, শুধু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান থাকলেই গণতন্ত্রের মান নিশ্চিত হয় না, রাজনৈতিক আচরণ ও সংস্কৃতির বিকাশও জরুরি। তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ, সংসদের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার এবং স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য। তবে আসল পরীক্ষা সবসময় রাজনৈতিক আচরণে- যা একদিনে বদলানো যায় না।’
উপদেষ্টা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, যুব বেকারত্ব ও ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির বিস্তার পরস্পর সম্পর্কিত সমস্যা তুলে ধরে বলেন , এসব শুধু রাজনীতিকে দোষারোপ করে সমাধান করা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষা ঘাটতি, ঝড়ে পড়ার উচ্চ হার ও যুব বেকারত্বই অনেক তরুণকে জীবিকার জন্য রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার দিকে ঠেলে দেয়।’
অর্থনৈতিক দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নয়ন নিশ্চিত করে না, যদি না গভীর প্রশাসনিক সংস্কার হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক যোগসাজশের অবসান ঘটে।
তিনি বলেন, ‘নতুন নিয়ম ও বিধিমালার মাধ্যমে সংস্কারে সাহায্য করতে পারে, তবে সেগুলোর সফলতা পুরোপুরি নির্ভর করে আচরণগত পরিবেশের ওপর-প্রণোদনা ব্যবস্থা, আস্থার সংস্কৃতি এবং যে সামাজিক মানদণ্ডের মধ্যে বাজার পরিচালিত হয়।’
চীন ও ভিয়েতনামের সংস্কার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা, আস্থা এবং শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা টেকসই প্রবৃদ্ধি এনে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক জবাবদিহিতা অবশ্যই দায়িত্ববোধের সঙ্গে মিল থাকতে হবে।’
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তথ্য উৎপাদনে স্বচ্ছতা বাড়ানো প্রমাণভিত্তিক নীতি প্রণয়নের জন্য জরুরি। বিবিএস-এর ডেটাসেট ডিজিটালাইজেশন করলে গবেষক ও সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে জাতীয় পরিসংখ্যান যাচাই করতে পারবেন, যা মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি না থাকলে কোনো নিয়মই অনিয়ম ঠেকাতে পারবে না।’
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুনর্বণ্টন, সামাজিক সুরক্ষা, বাজার-রাষ্ট্র সম্পর্ক ও বৈষম্য হ্রাসের প্রশ্নগুলো আদর্শগত, যা দলগুলোকে তাদের ইশতেহারে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো দেশ টিকে থাকতে পারে না যদি নাগরিকদের ন্যূনতম জীবিকা নিশ্চিত না হয়; আর তা অর্জনে প্রয়োজন যথাযথ অর্থনৈতিক কাঠামো ও প্রকৃত রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি।
উপসংহারে তিনি বলেন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথ নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভাবন ও দায়িত্বশীল শাসনের ওপর। ‘রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া দুর্নীতি শুধু উৎস বদলায়। জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে টেকসই ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন অর্জন সম্ভব।’