শিরোনাম

বিপুল ইসলাম
লালমনিরহাট, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : লালমনিরহাটে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকার ২০০৬ সালে শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে হাঁড়িভাঙ্গা এলাকায় বিমান ঘাঁটির পাশে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) প্রতিষ্ঠা করে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর আওতাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে লালমনিরহাট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) আবারও কার্যক্রমে গতিশীলতা ফিরে পেয়েছে। বর্তমানে দুই শিফটে ৪১২ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানে মোট ১৩টি কোর্স চালু রয়েছে।
টিটিসিতে অনুমোদিত ৮১টি পদ থাকলেও পূরণ হয়েছে মাত্র ৩৯টি। এর মধ্যে সংযুক্তিতে বদলি আছেন ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফলে বাস্তবে মাত্র ২৩ জন জনবল নিয়ে পুরো প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। জনবল সংকটের মধ্যেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে কাজ করছে। বিদেশগামী শ্রমিকদের প্রতিযোগিতা বাড়ায় সরকার যে দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করছে, টিটিসি সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
প্রশিক্ষণার্থীরা সব ট্রেডে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও তৈরি করা হচ্ছে, যা স্থানীয় তরুণদের মধ্যে নতুন আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এখানে দুই মাস, তিন মাস ও ছয় মাস মেয়াদি বিভিন্ন কোর্স চালু আছে। বিদেশগামী গৃহকর্মীদের জন্য রয়েছে ৩০ দিনের হাউসকিপিং প্রশিক্ষণ।
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ ব্যাচে স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কোর্সও পরিচালিত হচ্ছে কেন্দ্রটিতে।
টিটিসির ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর (ট্রেড চার্জ) মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠানটি এখন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিগত সময় এই অধ্যক্ষের নানান ধরনের বেআইনি কার্যকলাপের কারণে প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে তেমন কাজ হয়নি। এ কারণে বিগত সময় প্রতিষ্ঠানে সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নবাগত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আইনুল হকের অভিজ্ঞ নেতৃত্বে প্রশিক্ষণের মান আরও উন্নত হয়েছে।
টিটিসির সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর (ইলেকট্রিক্যাল) যজ্ঞেশ্বর বর্মন বলেন, কারিগরি জ্ঞান সম্মত ও দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি করে দেশে ও বিদেশে কাজ এবং বাস্তবমুখী শিক্ষায় টিটিসি বর্তমানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং কোর্সে আধুনিকায়নের পাশাপাশি উন্নত যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ও প্রযুক্তিনির্ভর সরঞ্জাম যুক্ত করায় প্রশিক্ষণ এখন আরও বাস্তবভিত্তিক ও যুগোপযোগী হয়েছে। কর্মসংস্থান তৈরির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে এটি বিবেচিত হচ্ছে।
ড্রাইভিং প্রশিক্ষণার্থী রবিউল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান বলেন, এখানকার শিক্ষা নিয়েই দেশের বাইরে যাওয়া প্রস্তুতি নিচ্ছি এখানকার শিক্ষকরা অনেক আন্তরিক। আমরা ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রশিক্ষণার্থীরা সব ট্রেডে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এখানে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আইনুল হক বাসসকে বলেন, কিছুদিন আগে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তার ভাষায়, বিগত সময়ে প্রতিষ্ঠানটি নাজুক পরিস্থিতিতে পরিচালিত হলেও বর্তমানে দক্ষ জনশক্তি গঠনে টিটিসি নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মঞ্জুরিকৃত ৮১ পদের বিপরীতে মাত্র ২৩ জন জনবল দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে কাজের নানা সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়।
তবুও আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণার্থীরা এখান থেকে প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতা অর্জন করে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারবেন। যোগ্য দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশেও কাজের সুযোগ পেতে সক্ষম হবেন।