শিরোনাম

চট্টগ্রাম, ১৫ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক বর্তমানে এক ভয়াবহ মৃত্যু ফাঁদ ও আতংকের নাম। প্রতিদিনই এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে, হারাচ্ছে বহু প্রাণ। অথচ এটি দেশের অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করা অত্যাবশ্যক। নামে মহাসড়ক হলেও বাস্তবে এটি ২ লেনের আঞ্চলিক সড়ক। সড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণে আর কোন অজুহাত নয়, নয় কোন আশ্বাস, আমরা চাই প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন।
আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন আন্দোলন’। সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠক তামিম মির্জা।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে একদিকে যেমন প্রাণহানি ঘটছে, পঙ্গু হচ্ছে শত শত মানুষ, ১৪৮ কিলোমিটারের এই সড়কটি বেশিরভাগ জায়গায় ১৮ থেকে ২২ ফুট প্রশস্ত। অপ্রশস্ত সড়ক, বিভাজক না থাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
তামিম মির্জা বলেন, এ সড়কে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজারের মত যান চলাচল করে, সড়কটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক, সড়কের উভয়পাশে জঙ্গল থাকায় দূর থেকে বাঁক চোখে পড়ে না, বাঁকে নেই দিকচিহ্ন-সংবলিত সাইনবোর্ড কিংবা ফলক। সড়কের চেয়ে পার্কিং অনেকটা নিচু ও আঁকাবাকা, যে কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোরবেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের তথ্যানুযায়ী সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া ২ কিলোমিটারের মধ্যে বিগত এক বছরে ৮৬টি গাড়ি দূঘটনায় প্রায় ৩৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক। এবছর একই স্থানে পরপর ৩ দিনে ঘটেছে ৩টি দুর্ঘটনা। এতে ১৫ জন নিহতসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ২১ জন। ২০২১ সালের মার্চ মাসেও একই স্থানে ট্রাক ও লেগুনার মূখোমুখী সংঘর্ষে ১৬জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান সড়কে গতবছরের অক্টোবর হতে এবছরের অক্টোবর একবছরে প্রায় ৩শতাধিক পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে প্রায় ২শতাধিক আর আহত হয়েছে কয়েকশ। সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়া হাঁসের দীঘি এলাকায় মাইক্রোবাস ও বাসের সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা বলেন, লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির জঙ্গলিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনার পর অন্তর্বতীকালীন সরকারের দুজন উপদেষ্টা দুর্ঘটনাকবলিত স্থান পরিদর্শন করে শীঘ্রই এ সড়ককে চার কিংবা ছয় লেনে উন্নীত করার ঘোষণা দিলেও তা ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এপর্যন্ত অগ্রগতির কিছুই হয়নি।
তারা আরও বলেন, সড়কটি ৬ লেনের দাবিতে ইতিমধ্যে সড়কের যাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে বেশ কয়েকটি স্থানে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আর লাশের অপেক্ষায় বসে থাকবো না, আর কোন মায়ের বুক খালি হবার আগেই মহাসড়কে অবস্থান নেবো, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। আমাদের এ আন্দোলনে সকল পেশা, মতাদর্শ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহমত পোষণ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনের চকরিয়া উপজেলা প্রতিনিধি ইব্রাহিম ফারুক, সাতকানিয়া উপজেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ মাসুম, মোহাম্মদ মিনহাজ, লোহাগাড়া উপজেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ ফারুক ও মোহাম্মদ নাজাত প্রমুখ।