শিরোনাম

খুলনা, ১০ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): মৎস্য অধিদপ্তরের টেকসই উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য প্রকল্পের (এসসিএমএফপি) অংশ হিসেবে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ২৫ চিংড়ি চাষি ‘অভিজ্ঞতা বিনিময়’ এর অংশ হিসেবে আজ সোমবার যশোরের কেশবপুর উপজেলায় একটি ক্লাস্টার পরিদর্শন করেছেন।
যাতে উন্নত গলদা (মিঠা পানির চিংড়ি) চাষ পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল সফল গলদা চাষিদের কাছ থেকে উন্নত কৃষি ব্যবস্থা, পুকুর ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানা।
পরিদর্শনকারী দলকে কেশবপুর উপজেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস এবং তার কর্মীরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ডুমুরিয়া জেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিল্লুর রহমান রিগান, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা কে এম মহসিন আলম, সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার দাস এবং অ্যান্টিমা গোলদারসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
পরিদর্শনে কৃষকরা গৌরীঘোনা চিংড়ি ক্লাস্টার-১ এবং কেশবপুরের আধা-নিবিড় গলদা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। যা টেকসই চিংড়ি চাষের জন্য একটি সফল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।
উভয় ক্লাস্টারের কৃষকরা পারস্পরিক আলোচনায় অংশগ্রহণ, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা, কৌশল এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল বিনিময় করেন।
পরিদর্শক কৃষকরা জাল প্রদর্শন এবং পুকুর পরিদর্শনসহ মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
তারা চিংড়ির উৎপাদনের মান এবং দ্রুত বৃদ্ধিতে সন্তোস প্রকাশ করেন।
গৌরীঘোনা ক্লাস্টারটি ফিশটেক কর্তৃক সরবরাহ করা উচ্চমানের পুরুষ পিএল (পোস্ট-লার্ভা) ব্যবহার করে একটি আধা-নিবিড় ‘অল-মেল’ গলদা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে জৈব নিরাপত্তা, বর্ধিত জলের গভীরতা, নিয়মিত জলের গুণমান পর্যবেক্ষণ, সঠিক খাদ্য সরবরাহ এবং বৈজ্ঞানিক মজুত ঘনত্ব নিশ্চিত করে।
কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম, মো. তুহিন শেখ, মো. সুমন শেখ, সবুর মোল্লা, মমতাজ বেগম, আসমা বেগম এবং আকলিমা বেগম চাষ পদ্ধতি, ব্যয়-লাভ বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বাজার সংযোগ এবং ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনা সম্পর্কে পরস্পরকে শেয়ার করেন।
মৎস্য দপ্তর সূত্র জানায়, উল্লেখযোগ্যভাবে মাত্র ৮৩ দিনে চিংড়ির গড় ওজন ২৫-৩০ গ্রাম পৌঁছেছে। যা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যার ফলে সময় এবং ঝুঁকি কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, কেশবপুরের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস, ডুমুরিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ক্লাস্টার সভাপতি শেখ মাহতাব হোসেন, মেরিন মৎস্য ক্লাস্টার কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম এবং আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় কৃষকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা অন্যান্য চিংড়ি উৎপাদনকারী অঞ্চলে, বিশেষ করে খুলনায় গৌরীঘোনা মডেলের অনুকরণ করলে উৎপাদন দ্বিগুণ বা তিনগুণ হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন। এতে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি, গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধি সম্ভব হবে।
অংশগ্রহণকারী কৃষকরা বলেন, এই পরিদর্শন তাদের আধুনিক গলদা চাষ প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে। তারা তাদের খামারে পুরুষ পিএল মজুত, উন্নত নার্সারি ব্যবস্থাপনা, জৈব নিরাপত্তা এবং আধা-নিবিড় পুকুর ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তারা ভবিষ্যতেও একই ধরনের প্রশিক্ষণ ও বিনিময় কর্মসূচি আয়োজন অব্যাহত রাখার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরকে আহ্বান জানান।
কর্মকর্তা এবং অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশে একটি টেকসই, বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর চিংড়ি খাত গড়ে তোলার জন্য এই ধরনের ব্যবহারিক শিক্ষামূলক উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন।