শিরোনাম

রাঙ্গামাটি, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বেইনঘর উদ্বোধন আর চরকায় সুতা কাটার মধ্যদিয়ে রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান শুরু হয়েছে।
রাজবন বিহারের চীবর দান উৎসবই পার্বত্যাঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মাবলন্বীদের বৃহত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব। এই উৎসবে দেশ বিদেশের হাজার হাজার পুণ্যার্থী অংশ নেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মঙ্গল সূত্রপাঠ করে বেইন ঘর উদ্বোধন করেন মহাপরিনির্বাণগত মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শিষ্য ও রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির। পাশাপাশি বেগম রোকেয়া পদক প্রাপ্ত রাঙ্গামাটির নারী উদ্যেক্তা মিসেস মঞ্জুলিকা খীসা চরকায় সুতা কেটে চীবর বুননের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন।
আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে ভিক্ষু সংঘের কাছে ২৪ ঘণ্টায় তৈরীকৃত চীবর উৎসর্গের মাধ্যমে শেষ হবে ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির। পরে আবাসিক ভান্তেরা বেইনঘর প্রদক্ষিণ করেন এবং চীবর বুননে অংশ নে য়া পুণ্যার্থীদের আশীর্বাদ করেন।
শুক্রবার সকালে মুল অনুষ্ঠানের আগে প্রথমপর্বে সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, সদ্ধর্ম দেশনা ও ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদানের পর দুপুরে কঠিন চীবর ও কল্পতরু শোভাযাত্রা শুরু হবে। বেইনঘর থেকে কঠিন চীবর ও কল্পতরু শোভাযাত্রা শুরু করে বিহার এলাকা প্রদক্ষিণ করে রাজবন বিশ্বশান্তি প্যাগোডার পাশে বড় মাঠে অনুষ্ঠান মঞ্চে নিয়ে আসা হবে।
অনুষ্ঠানে কঠিন চীবরটির সঙ্গে বুদ্ধমুর্তি দান, অষ্ট পরিষ্কার দান, কল্পতরু দান, রাজবন বিশ্ব শান্তি প্যাগোডা নির্মাণে টাকাসহ বিভিন্ন দানীয় সামগ্রী দান করবেন পুণ্যার্থীরা। এছাড়া থাকবে ভিক্ষুসংঘের সদ্ধর্ম দেশনা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও অতিথিদের ধর্মীয় ভাষণ।
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। প্রাচীন পূর্ণবর্তী নারী বিশাখা প্রবর্তিত নিয়ম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে, রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতা তাঁতে বুনে চীবর তৈরি করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান।
এই অনুষ্ঠান ঘিরে উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে রাজবন বিহার এলাকাসহ গোটা রাঙ্গামাটি শহর। উৎসবে যোগ দিতে রাজবন বিহারে বৃহস্পতিবার থেকে অগণিত পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। উৎসব ঘিরে রাজবন বিহার এলাকায় বসছে মেলা। ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, চরকায় সুতা কাটা, বেইন বোনা, কল্পতরু শোভাযাত্রাসহ চলছে বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন।
এ উপলক্ষে রাজবন বিহার এলাকা জুড়ে অর্ধশতাধিক চরকা ও ২ শতাধিক বেইন স্থাপন করা হয়েছে। ৫ শতাধিক নারী এই চীবর তৈরির কাজে অংশ নেন। উৎসবকে নির্বিঘ্নে করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্য বিহারের ভেতরে ও বাইরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত রয়েছে।
জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টার পরিশ্রমে তৈরি চীবর রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় প্রয়াত পার্বত্য ধর্মীয় গুরু বনভন্তে স্মৃতির উদ্দেশ্যে শুক্রবার ভিক্ষু সংঘের কাছে উৎসর্গ করবেন। শুক্রবার রাতে রাজবন বিহারে ফানুষ উড়িয়ে শেষ হবে এই কঠিন চীবর দান উৎসব।